দীর্ঘযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া!

দীর্ঘযুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। এজন্য সমরাস্ত্র উৎপাদনে গতিসঞ্চার ও সশস্ত্র বাহিনীতে নতুন ইউনিট সংযোজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। দ্রুত উৎপাদন বৃদ্ধির তাগিদ দিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও অন্যান্য কর্মকর্তারা একের পর এক অস্ত্র কারখানা পরিদর্শন করছেন।

পুতিন গতকাল শেগলোভস্কি মেশিন বিল্ডিং প্লান্ট পরিদর্শন করেন। ছবি ক্রেমলিনের ওয়েবসাইট থেকে

পুতিন গতকাল শুক্রবার তুলা শহরে শেগলোভস্কি মেশিন বিল্ডিং প্লান্ট পরিদর্শন করেছেন। তিনি কারখানার বেশ কয়েকটি প্রডাকশন ও ডিজাইন ফ্লোর ঘুরে দেখেন এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পুতিনের আগমন উপলক্ষে শেগলোভস্কি কারখানা কর্তৃপক্ষ টাইগার-এম ও করনেট ট্যাংকের নতুন একটি মডেল উম্মোচন করে।

রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তুলা অস্ত্র তৈরির জন্য বিখ্যাত। বন্দুক থেকে শুরু করে ট্যাংক, সাঁজোয়া যান, মিসাইল ও অন্যান্য ভারি অস্ত্র প্রস্তুত হয় এ শহরের কয়েকটি কারখানায়। পুতিন তার সফরকালে তুলার সমরাস্ত্র কারখানাগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি উৎপাদন কার্যক্রমে গতিসঞ্চারের তাগিদ দেন। যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় অধিকতর কার্যকর অস্ত্র তৈরির স্বার্থে প্রয়োজনে ডিজাইন কার্যক্রমে সেনা কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

একইদিন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু পশ্চিমাঞ্চলীয় ইজেফেস্ক শহরে কালাশনিকভ কারখানা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, কাঁধে বহনযোগ্য এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ও প্রেসিশন-গাইডেড মিউনিশন উৎপাদন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন।

এদিকে এক সপ্তাহে রুশ নৌবাহিনীর কাছে দুটি সাবমেরিন হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ শনিবার সেইন্ট পিটার্সবার্গে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে নতুন ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন ভেলিকিয়ে-লুকি উদ্বোধন করা হয়েছে। রুশ নৌবাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় বহরে যুক্ত হবে এ সাবমেরিন। এর আগে বুধবার মাল্টি-পারপাস নিউক্লিয়ার সাবমেরিন ট্যাম্বভ প্রয়োজনীয় আধুনিকায়ন শেষে রুশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। একইদিন ডনবাস অঞ্চলে যুদ্ধরত রুশ সেনাবাহিনীর রাভরি ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা হয় নতুন টি-৯০এম প্ররিভ ট্যাংক।

গত বুধবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কলেজিয়াম বৈঠকে দেওয়া বক্তৃতায় পুতিন ইউক্রেনে দীর্ঘ যুদ্ধের আভাস দিয়ে বলেন, যত সময়ই লাগুক, রাশিয়া ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের লক্ষ্য অর্জন করবে। এ বিষয়ে রাশিয়ার কোনো তাড়াহুড়ো নেই। লক্ষ্য পূরণ হবার বিষয়ে কোনোরকম সংশয় নেই।

বৈঠকে পুতিন রুশ নৌবাহিনীতে নতুন তিনটি ইউনিট সংযোজন এবং সশস্ত্র বাহিনীর মোট সদস্য সংখ্যা ১৯ লাখে উন্নীতকরণের ঘোষণা দেন। বাহিনীগুলোর চাহিদা অনুযায়ী রুশ সরকার সব ধরনের অস্ত্র, রসদ ও তহবিল জোগান দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ালেও সরকার কোনোভাবেই দেশীয় অর্থনীতির সামরিকায়ন করবে না। রাশিয়া কখনো মাখন কেনার টাকা দিয়ে ট্যাংক কিনবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

পৃথক খবরে জানা গেছে, রাশিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ট মিত্র ও প্রতিবেশী বেলারুশের ভূখণ্ডে গত মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার দেওয়া এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও ইস্কান্দার মিসাইল মোতায়েন করা হয়েছে। এতে করে দুই প্রতিবেশী দেশের যৌথ বিমান প্রতিরক্ষা জোরদার হবে বলে মন্তব্য করেছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া রাশিয়া ও বেলারুশের সেনাবাহিনী বুধবার থেকে বেলারুশে বড় ধরনের যৌথ মহড়া শুরু করেছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মিখাইল হালুজিন বলেছেন, দুই দেশের যৌথ প্রতিরক্ষা জোরদারের লক্ষ্য নিয়ে বেলারুশে যৌথ সামরিক মহড়া শুরু হয়েছে এবং সে দেশে রুশ বাহিনীর বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট মোতায়েন করা হয়েছে। বেলারুশের ভূখণ্ডে সম্ভাব্য আগ্রাসনের মূহূর্তে যৌথ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।