মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে চীনের বিশেষ দূতের বৈঠক

মিয়ানমারের সাতটি সশস্ত্র নৃতাত্ত্বিক সংগঠনের (ইএও) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সে দেশে নিযুক্ত চীনের বিশেষ দূত দেং জিজুন। চলতি সপ্তাহে চীনের ইউনান প্রদেশে এসব বৈঠক হয়েছে। ইএও সূত্রের বরাতে মিয়ানমার বিষয়ক দৈনিক দ্য ইরাবাদ্দি এ কথা জানিয়েছে।

মিয়ানমারে বিশেষ দূত নিয়োগ হবার আগে আসিয়ানে চীনের প্রতিনিধি ছিলেন দেং জিজুন

জানা গেছে, ইএও প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে গতকাল বুধবার নেপিদ পৌঁছেন দেং জিজুন। যে সাতটি ইএওর সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন, তার সবকটি উত্তর মিয়ানমারে সক্রিয়। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও চীন সরকার বৈঠকের বিষয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।

মিয়ানমারে চীনের নবনিযুক্ত বিশেষ দূত দেং জিজুন ২০২০ সাল থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত আসিয়ানে চীনের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে ২০১৮-২০১৯ সময়কালে তিনি আফগানিস্তানে চীনের বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সূত্র জানায়, দেং জিজুন পৃথকভাবে ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি (ইউডব্লিউএসএ), কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এনডিএএ), শান স্টেট প্রগ্রেস পার্টি (এসএসপিপি), আরাকান আর্মি (এএ), তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) ও মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মির (এমএনডিএএ) প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সশস্ত্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কেআইএ, টিএনএলএ ও এমএনডিএএ বর্তমানে মিয়ানমার সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে সশস্ত্র লড়াই করছে। এরমধ্যে কেআইএ উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন প্রদেশে এবং টিএনএলএ ও এমএনডিএএ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শান প্রদেশে সক্রিয় রয়েছে।

বৈঠকে অংশ নেওয়া আরেক সংগঠন রাখাইনভিত্তিক আরাকান আর্মি কয়েক মাসের টানা সংঘাতের পর নভেম্বরের শেষার্ধ থেকে মানবিক কারণে অনানুষ্ঠানিক যুদ্ধবিরতি পালন করছে।

বৈঠকের সত্যতা নিশ্চিত করে ইউডব্লিউএসএর লিয়াজোঁ কর্মকর্তা নুয়ি রাং বলেছেন, আমরা তার (চীনা দূত) সঙ্গে বৈঠক করেছি, এটা ঠিক। তবে কেবলমাত্র সাক্ষাৎ ও পরিচয় হয়েছে। বিশেষ কোনো ইস্যুতে আলোচনা হয়নি।

এ বিষয়ে এসএসপিপির দ্বিতীয় সচিব কর্নেল সাই জু বলেন, চীনা দূতের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ ও পরিচয় ছাড়া বিশেষ কোনো আলোচনা হয়নি। সাক্ষাতে তিনি বলেছেন, চীন মিয়ানমারে সংঘাত চায় না, চীন তার সীমান্ত এলাকায় স্থিতিশীলতা চায়, সংঘাত অব্যাহত থাকলে মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ শান্তি প্রতিষ্ঠা কঠিন হয়ে পড়বে ভেবে চীন উদ্বিগ্ন।

চীনা দূত ইউডব্লিউএসএ, এসএসপিপি ও এনডিএএর সঙ্গে আরেক দফা বৈঠকের আগ্রহ প্রস্তাব দিয়েছেন জানিয়ে সাই জু বলেন, আমরা সে প্রস্তাব নাকচ করেছি। কারণ তার প্রস্তাবিত তারিখে সাক্ষাৎ করা আমাদের জন্য ঠিক হবে না। আমাদের তিন সংগঠন চীনের বিশেষ দূতের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে বৈঠক করতে চাই। পৃথক বৈঠকে আমরা রাজি না।

তিনি বলেন, আমাদের মিত্র সংগঠন ইউডব্লিউএসএর কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্য এখনো মুক্তি পাননি। কেউ কেউ খ্রিস্টান রয়েছেন, যারা ক্রিসমাসের সময় কোথাও ভ্রমণে রাজি নন। এসব কারণে বৈঠকের প্রস্তাব নাকচ করা হয়েছে।

মিয়ানমার-ভিত্তিক একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক পরিচয় প্রকাশ না করার সূত্রে বলেছেন, মার্কিন কংগ্রেসে সম্প্রতি পাশ হওয়া বার্মা অ্যাক্টের পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে চীন মিয়ানমারের সশস্ত্র নৃতাত্ত্বিক সংগঠনগুলোর (ইএও) সঙ্গে যোগাযোগের উদ্যোগ নিতে পারে। বার্মা অ্যাক্টে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী সংগঠন ও ইএওর জন্য আর্থিক ও কারিগরি সহায়তার বিধান রয়েছে। চীন এতদিন কিছু করেনি। তবে বার্মা অ্যাক্ট পাশের পরপর তারা তড়িঘড়ি বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে।