অকালে ঝরল ৪৪৬ শিক্ষার্থীর প্রাণ, দুই-তৃতীয়াংশই নারী

সদ্য বিদায়ী বছরে সারাদেশে ৪৪৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এরমধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই নারী। জাতীয় পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ওপর ভিত্তি করে এই পরিসংখ্যান জানিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন। আজ শুক্রবার অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটি।

প্রতীকী ছবি

আঁচল ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার ফারজানা আক্তার লাবনী সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।

আগের জরিপের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, স্কুলপড়ুয়া থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়, সব স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যেই আত্মহত্যা সংক্রামক হারে বেড়ে চলছে। মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশে আত্মহত্যার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আঁচল ফাউন্ডেশন। ২০২২ সালে আত্মহননকারী শিক্ষার্থীদের সংখ্যা খুঁজতে গিয়ে তারুণ্যভিত্তিক এই সংগঠনটি দেখতে পায়, সারাদেশে ৪৪৬ জন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।

পত্রপত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে প্রাপ্ত হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালে সর্বমোট স্কুল এবং কলেজ পর্যায়ের আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৪৬ জন। এরমধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থী রয়েছে ৩৪০ জন। কলেজ ও সমমান পর্যায়ে ১০৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহনন করেছে। তাদের মাঝে শুধু মাদ্রাসাগামী শিক্ষার্থী রয়েছেন ৫৪ জন। এরমধ্যে ছাত্রী ২৮৫ জন এবং ছাত্র ১৬১ জন।

আট বিভাগের মধ্যে আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে, অর্থাৎ ২০ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগ। চট্টগ্রাম বিভাগে যা ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া খুলনা বিভাগে ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, রংপুরে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বরিশালে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সিলেটে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী রয়েছেন।

পরিসংখ্যান বলছে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি। স্কুল এবং কলেজগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যাকারী ৬০ দশমিক ৯০ শতাংশ নারী এবং ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ পুরুষ রয়েছেন।

শুধু স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যাকারী নারী শিক্ষার্থীর পরিমাণ ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশ। শুধু কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী ৫৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং পুরুষ ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

সংগঠনটি এক গবেষণায় আত্মহত্যার পেছনের কারণ হিসেবে মান-অভিমানকে দেখিয়েছে। জরিপে উঠে আসা এমনই বেশ কিছু কারণের মধ্যে দেখা যায়, অভিমান সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে। ২৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে অভিমান করে। তাদের মধ্যে বড় অংশই পরিবারের সদস্যদের ওপর অভিমান করেছিল। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে প্রেমঘটিত কারণ, পারিবারিক কলহ ইত্যাদি।

সংবাদ সম্মেলনে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা তানসেন রোজ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক তাহমিনা ইসলাম, পরামর্শক মনোবিজ্ঞানী শাহরিনা ফেরদৌস এবং সেরেনিটি-একটি মনোসামাজিক সহায়তা কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা অংশীদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।