ঢাকায় আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে জমজমের পানি

বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা জমজমের পানিকে বিশ্বের সেরা পানি বলে বিশ্বাস করেন। সৌদি আরবের পবিত্র কাবা শরীফ থেকে ২১ মিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত জমজম কূপ। বর্তমানে ঢাকা শহরে আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে এই জমজম কূপের পানি।

ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে জমজমের পানি

হজ বা ওমরাহ পালনের সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ সহজেই জমজমের পানি পান করতে পারেন। এমনকি এই পানি দিয়ে ওজু এবং গোসলও করতে পারেন। হাজীরা ফেরার সময় তাদের পরিবারের জন্যও এই পানি নিয়ে আসেন। জমজম পানির পাঁচ লিটারের সিল করা বোতলের জন্য তাদের ১০ সৌদি রিয়াল বা ২৮২ টাকা দিতে হয়। তবে একটি ছোট বোতল বা এক গ্লাস পানির জন্য কোনো টাকা দিতে হয় না।   

এই জমজমের পানি এখন ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে। বায়তুল মোকাররম মার্কেট এলাকায় অন্তত ২৫০ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এই ব্যবসা করছেন। সর্বনিম্ন দাম প্রতি লিটারে সাড়ে তিন হাজার টাকা। অবশ্য জমজমের পানি বিক্রির ওপর কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি নেই।

এদিকে ব্যবসায়ীরাও জমজমের পানি বিক্রির বিষয়ে বিস্তারিত বলতে অনিচ্ছুক। তারা কীভাবে এটি সংগ্রহ করেন, কীভাবে এটি সারা বছর ধরে বিক্রি হয়, বা সাধারণ পানি মেশানো হচ্ছে কিনা- এই বিষয়ে প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি।

বায়তুল মোকাররম মার্কেটের নিচতলায় একটি ছোট দোকান চালান ৬৫ বছর বয়সী মো. হারুন মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি উন্নতমানের ইহরামের কাপড়, তোয়ালে, জায়নামাজ, আতর, টুপি বিক্রি করি। এর পাশাপাশি আমি জমজমের পানিও বিক্রি করি।'

তিনি আরও বলেন, ‘জমজম কূপের পানির চাহিদা অনেক, যা আমরা পূরণ করতে পারি না। আমরা হজে যাওয়া হাজীদের সাথে কথা বলি এবং অগ্রিম টাকা দিয়ে জমজমের পানি সংগ্রহ করি।'

তিনি পাঁচ লিটারের বোতল ৩ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করেন কিন্তু সেগুলো কিনতে কত টাকা দেন তা প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান।

জমজমের পানি বিক্রি করেন এমন আরেকজন দোকানদার হলেন ৪০ বছর বয়সী মোহাম্মদ উল্লাহ। তিনি জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম এলাকায় অন্তত আড়াইশ ব্যবসায়ী জমজমের পানি বিক্রি করেন।

তিনি বলেছেন, ‘কেউ জমজমের পানি নিয়মিত বিক্রি করতে পারেন না। অনেকেই হজযাত্রীদের সহায়তায় জমজমের পানি সংগ্রহ করেন। অন্যরা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সংগ্রহ করেন। আমরা তাদের পানির জন্য টাকা দেই। আমাদের যা খরচ হয়েছে তা হিসাব করে পানির দাম নির্ধারণ করি।'

তবে কিছু ব্যবসায়ী খুচরাভাবে পানি বিক্রি করেন, যেমন ২৫০মিলি এর বোতল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। অবশ্য অনেক ক্রেতা এগুলোকে আসল জমজম পানি বলে বিশ্বাস করেন না। মোহাম্মদ উল্লাহ জানিয়েছেন, ছোট বোতলের পাইকারি দর প্রায় ২৫০ টাকা।

এদিকে জমজমের পানি বিক্রির বিষয়ে গুলিস্তানের পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব ইমরানুল বারী সিরাজী বলেন, 'জমজমের পানি বিক্রি করা জায়েজ ও বৈধ। শরীয়তের নীতি অনুযায়ী, যে কোনো বৈধ মালিকানাধীন সম্পত্তি বিক্রি জায়েয ও বৈধ। যখন একজন ব্যক্তি উপহার হিসেবে জমজমের পানি পান, তখন তিনি এর মালিক হয়ে যান। যে কোনো সম্পত্তি বিক্রি শরীয়তে বৈধ।'

উল্লেখ্য, হাদিস অনুযায়ী জমজমের পানি পান করার কিছু রীতি আছে; যেমন, কিবলার দিকে মুখ করে বিসমিল্লাহ বলা, তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করা এবং সবশেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা। এছাড়া জমজমের পানি পান করার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল আল্লাহর কাছে দোয়া করা।