১৬ বছর ধরে রাস্তায়, মৃত্যুর পর জানা গেল পরিচয়

ফেনীর বাসিন্দাদের কাছে এক পরিচিত মুখ অচেনা 'বুলবুল'। তাকে সবাই শুধু দেখতেন, কিন্তু তার সম্পর্কে কেউ কিছু জানতেন না। কখনও রেল স্টেশন, কখনও শহীদ মিনার, রাজাঝির দীঘিরপাড়, কখনও স্টেশন রোড বা কখনও ব্যস্ততম ট্রাংক রোডসহ ফেনীর বিভিন্ন জায়গায় উদ্ভ্রান্তের মতো কাটিয়েছেন বুলবুল।

হাসপাতালে আতাউর রহমান (বুলবুল), মৃত্যুর পর আতাউরের জানাজা

বাসা-বাড়িহীন, আত্মীয় স্বজনহীন এই মানুষটি গায়ে বস্তা জড়িয়ে রাস্তায় রাস্তায় উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়াতেন। কেউ খাবার দিলে খেতেন, না হলে খেতেন না। খাবারের জন্য কাউকে তেমন বিরক্ত করতেও দেখা যায়নি তাকে। এভাবে তার কেটেছে ১৬ বছর। এতদিনে কেউ জানতে পারেনি ফেনীর বাসিন্দাদের দেওয়া ‘বুলবুল’ নামের মানুষটির আসল পরিচয়।

২৭ জানুয়ারি ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন সেই 'বুলবুল'। মৃত্যুর পর জানা গেছে তার আসল পরিচয়।

বুলবুলের আসল নাম আতাউর রহমান। তার বাড়ি জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের গাংগাইর গ্রামে। তিনি মৃত আবদুস সাত্তারের ছেলে।

আতাউর রহমানের মৃত্যুর পর তার একটি ছবি পোস্ট করে ফেনীর সামাজিক সংগঠন 'সহায়' এর স্বেচ্ছাসেবকেরা। সেই ছবিটি চোখে পড়ে ঢাকায় থাকা আতাউরের এক আত্মীয়ের। সাথে সাথে তিনি আতাউরের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেন। এরপর বের হয়ে আসে তার আসল পরিচয়।

আতাউর রহমানের পরিবার জানিয়েছে, ছোটবেলায় মাকে হারান আতাউর। এরপর তার বাবা আরেকটি বিয়ে করেন। পরিবারও ছিল অস্বচ্ছল। ১৯৮৮ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পাস করতে পারেননি। এরপর মানসিক সমস্যার শুরু হয় আতাউরের। দীর্ঘদিন মানসিকভাবে অসুস্থ থাকার পর ২০০৬ সালে বাবার মৃত্যুর পর পুরোপুরি অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। একপর্যায়ে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। পরিবারের সদস্যরা অনেক চেষ্টা করেও তার খোঁজ পাননি।

২০১৮ সালের দিকে এক রিকশাচালকের মাধ্যমে ফেনীতে আতাউরের খোঁজ পেয়েছিলেন তার পরিবার। তখন তার ভাই ও স্বজনরা তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে যান। কিন্তু বাড়ি ফিরতে রাজি হননি আতাউর। এসব তথ্য জানতেন না ফেনীর বাসিন্দারা।

আতাউরের ছোটভাই জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মশিউর রহমান লেবু বলেন, ২০০৬ সালে বাবার মৃত্যুর পর হঠাৎ ভাইয়া নিখোঁজ হন। এরপর ২০১৮ সালে এক রিকশাওয়ালার মাধ্যমে জানতে পারি তিনি ফেনীতে আছেন। আমরা তাকে আনতে যাই। কিন্তু ভাইয়ার মানসিকভাবে পুরোপুরি অসুস্থ ছিলেন। তাকে নানাভাবে বুঝিয়েও বাড়িতে আনতে পারিনি। জয়পুরহাট থেকে ফেনীর দূরত্ব বেশি হওয়ায় তার খোঁজও রাখতে পারিনি।

সামাজিক সংগঠন 'সহায়'র সভাপতি মঞ্জিলা মিমি বলেন, কয়েকদিন ধরে বুলবুল (আতাউর) অসুস্থ ছিলেন। হাসপাতালে যেতে বললেও তিনি যেতে রাজি হতেন না। একপর্যায়ে স্থানীয় কমিশনারের সহযোগিতায় ফেনী জেনারেল হাসপাতালে তাকে ভর্তি করাই। হাসপাতালে ভর্তির পর তার গায়ে থেকে বস্তা খুলে নিয়ে জামাকাপড় পরিয়ে দিই। রাতেই তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর পর সাথে সাথে আমরা ফেসবুকে একটি পোস্ট করি।

আতাউরের ভাই মশিউর রহমান লেবু আরও বলেন, ঢাকায় আমাদের এক মামাতো ভাই থাকেন। তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারেন আতাউর মারা গেছেন। মামাতো ভাই আমাদেরকে বিষয়টা ফোন করে জানান। এরপর আমরা খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করি। ভাইয়ার লাশ জয়পুরহাটে নিয়ে আসা হয়েছে। রোববার দাফন করা হয়েছে।