অবশেষে প্রশ্নফাঁস মামলার চার্জশিটে বুয়েট অধ্যাপক নিখিল

অবশেষে ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস মামলার সম্পূরক চার্জশিটে বুয়েট অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ৩১ জানুয়ারি, মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।

বুয়েট অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধর

২৪ জানুয়ারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলার চার্জশিটে বুয়েটের অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের নাম না থাকায় আপত্তি তোলেন আদালত। চার্জশিট থেকে কেন এবং কীভাবে তার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে কারণ দর্শাতে বলা হয়।

ঢাকার একটি আদালত কারণ দর্শানোর জন্য গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাব-ইন্সপেক্টর আইও শামীম আহমেদকে তলব করেছেন। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্পূরক চার্জশিট দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এদিকে নির্ধারিত সময়ের আগেই মঙ্গলবার অধ্যাপক নিখিলের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে সম্পূরক অভিযোগ জমা দিয়েছেন সাব-ইন্সপেক্টর শামীম।

পূর্বের চার্জশিটের আসামি দেলোয়ার হোসেনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির উদ্ধৃতি দিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, প্রফেসর নিখিল নিজেই আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (AUST) জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বনিম্ন হারে দরপত্র নিয়ে আসেন এবং তিনি সব নিয়ন্ত্রণ করেন।

তদন্তকারী প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, 'নিখিল ধর প্রশ্নপত্র তৈরি এবং মুদ্রণের জন্য AUST-এর পরীক্ষা কমিটিকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়েছিলেন। তার নির্দেশ অনুসারে, দেলোয়ার নিখিল ধরের ব্যাগে ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষার জন্য এক সেট প্রশ্ন রেখেছিলেন।' পরীক্ষাটি তারিখ ছিল ২০২১ সালের ৬ নভেম্বর।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঘটনার আগে নিখিল ধরের সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়েছিল, তাই ঘটনার সঙ্গে নিখিলের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়।

সম্পূরক চার্জশিটে, তদন্তকারী নিখিলকে 'পলাতক' হিসেবে দেখিয়েছেন। আদালতে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তবে এর আগে তিনি কোনও আদালত থেকে জামিন পাননি।

গেল বছরের ১৬ নভেম্বর একই তদন্তকারী কর্মকর্তা অধ্যাপক নিখিলকে বাদ দিয়ে চার্জশিট দাখিল করেন।

সেই চার্জশিটে তদন্তকারী লিখেছিলেন যে, অধ্যাপক নিখিল দেলোয়ার হোসেনের কাছ থেকে প্রিন্ট করা প্রশ্নপত্রের কোনো কপি পাননি। তবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে নিখিলের জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন দেলোয়ার।

তদন্তকারী আরও বলেছেন, দেলোয়ারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পরীক্ষা করে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে অধ্যাপক নিখিলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কোনো সত্যতা মেলেনি। তাই মামলার অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দিতে আদালতের কাছে আবেদন করেন তিনি।

ডেইলি স্টারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে মামলার চার্জশিটের দুটি কপিও রয়েছে। পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনে বাড্ডা থানায় ২০২১ সালের নভেম্বরে করা মামলায় তদন্তের সময় দেলোয়ারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অধ্যাপক নিখিলের নাম উঠে আসে।

কয়েকদিন পর ২১ নভেম্বর নিখিলকে বুয়েটের শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান পদ এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৬ নভেম্বর পাঁচটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস হয়। পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই উত্তরসহ প্রশ্নপত্রের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের মধ্যে দেলোয়ারসহ আটজন বিভিন্ন সময় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।