ভুটান থেকে বিদ্যুৎ, চুক্তি এগোয়নি আদানির কারণে

বাংলাদেশের চাহিদা মেটাতে ভুটানের দরজিলুংয়ে ১ হাজার ১২৫ মেগাওয়াট জলবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে ২০১৬ সালে নীতিগত সমঝোতায় পৌঁছে ভুটান, বাংলাদেশ ও ভারত। এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশ ও ভুটান স্বাক্ষর করলেও ভারত বিলম্ব করছিল। পরের বছর আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে বিদ্যুত বিক্রির চুক্তি করলে দরজিলুং প্রকল্পটি চাপা পড়ে যায়।

২০১৫ সালে ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো নোরবুর সঙ্গে দরজিলুং প্রকল্প এলাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের দুই রাষ্ট্রদূত

জ্বালানি বিষয়ক গবেষণা ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এনারডাটা জানিয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটান যৌথভাবে ভুটানের লুয়েনৎসে জেলায় ১ হাজার ১২৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে সমঝোতায় পৌঁছে। ১২৫ কোটি ডলারের প্রকল্পটিতে বাংলাদেশের ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের কথা ছিল।

এ বিষয়ে ভুটানের দৈনিক দি ভুটানিজ জানিয়েছে, দরজিলুং জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে তিন দেশের নীতিগত বোঝাপড়ার ভিত্তিতে ভুটান সরকার একটি সমঝোতা স্মারকের খসড়া তৈরি করে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকা ও দিল্লীতে খসড়াটি পাঠানো হয়। বাংলাদেশ ফেব্রুয়ারি মাসেই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। তবে ভারত চুক্তিটি খতিয়ে দেখতে সময় চায়।

২০১৬ সালের ৭-১১ এপ্রিল ভারতের বিদ্যুৎ সচিব পি.কে.পুজারির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল থিম্পু সফরে গেলে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লিয়নচেন শেরিং তোবগে দরজিলুং প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চান। জবাবে ভারতের কর্মকর্তারা বলেন, ভারত সরকার এ প্রস্তাবের প্রতি খুবই সমর্থনশীল এবং বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।

এরপর প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠকে ভুটানের পররাষ্ট্র সচিব দাশো ইয়েশি ওয়াংদি দরজিলুং প্রকল্পের কথা ওঠালে ভারতের পক্ষ থেকে একই জবাব দেওয়া হয়। ভারত সরকারের জয়েন্ট সেক্রেটারি নর্থ ও জয়েন্ট সেক্রেটারি হাইড্রো ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সে সময় থিম্পুতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জিষ্ণু রায় চৌধুরী দরজিলুং প্রকল্পের বিষয়ে জোরালো আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিন দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে এবং দরজিলুং প্রকল্পের বিষয়ে তাদের রাজনৈতিক ইচ্ছাও রয়েছে।

ভুটানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিয়নপো নোরবু থিম্পুতে নিযুক্ত ভারত ও বাংলাদেশের দুই রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে দরজিলুং প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। বাংলাদেশও এ প্রকল্পের বিষয়ে ভারতের কাছে তদবির করে। তবে এখন পর্যন্ত ভারত ওই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেনি।

২০১৬ সালের নভেম্বরে সাসেকের পক্ষ থেকে ভুটানে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের ত্রিপক্ষীয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের কথা জানানো হয়। পরের বছর নভেম্বরে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে আদানির বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তি করে।

দি ভুটানিজ সম্পাদক তেনজিং লামসাং বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আদানি থারমাল পাওয়ারের চুক্তি হবার পর ভারত দরজিলুং প্রকল্পকে নিরবে মাটিচাপা দিয়েছে। আদানির প্রকল্পটি এখন বিদ্যুতের চড়া দামের কারণে বাংলাদেশে বিতর্কের মুখে। যদিও ভুটানের সঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ যথেষ্ট সস্তায় বিদ্যুৎ পেত।

তিনি আরও বলেন, ভুটান থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠাতে ভারতের ভূখণ্ড হয়ে সঞ্চালন লাইন ও টাওয়ার বসাতে হতো। এ কারণে ভারতকে বাদ দিয়ে ভুটান ও বাংলাদেশের আগানো সম্ভব ছিল না।