তুরস্কের নির্বাচনেও লাগতে পারে ভূমিকম্পের ধাক্কা

তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে গত সোমবার যে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে তা মে মাসে অনুষ্ঠেয় দেশটির নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বলে জানিয়েছেন একজন তুর্কি কর্মকর্তা। প্রয়োজন হলে কর্তৃপক্ষ ভোট স্থগিত করার বিষয়ে বিবেচনা করতে পারে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। খবর রয়টার্স

ভূমিকম্পের বিপর্যয় তুরস্কের নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে

প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তৃতীয় দফায় দেশ শাসন করতে ইচ্ছুক। গত মাসে তিনি নির্বাচনের তারিখ এক মাস এগিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ফলে ১৪ মে তুরস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভূমিকম্পের আগে প্রকাশিত এক জনমত জরিপে বলা হয়েছে যে এবারে এরদোয়ানকে সবচেয়ে কঠিন নির্বাচনী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।

এদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া, তুর্কি লিরার মূল্য কমে যাওয়ার কারণে এরদোয়ানের জনপ্রিয়তা ইতোমধ্যেই হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর নিহতের সংখ্যা যতই বাড়ছে তার বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ থেকে রাজনৈতিক ফল যাই হোক না কেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের যৌক্তিক চ্যালেঞ্জ অপরিসীম। ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অঞ্চলটিতে ১.৩ কোটি লোকের বাস। তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে এগুলো পুনর্নির্মাণ করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তুর্কি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘নির্বাচনের আরও কয়েক মাস সময় আছে। এই মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে কথা বলা সত্যিই খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে তিন মাসের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। জনসংখ্যার শতকরা ১৫ ভাগ লোক এই অঞ্চলে বাস করেন। এটি এমন একটি অঞ্চল যা জিডিপির ১০% এর কাছাকাছি উৎপাদন করে।'

তিনি আরও বলেন, ‘এরদোয়ানের একে পার্টি (একেপি) এবং তার সংসদীয় মিত্র জাতীয়তাবাদী এমএইচপি এই বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করবে। তবে ভূমিকম্পের পরপরই এই ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে যেখানে মৃতের সংখ্যা এখনো বাড়ছে।'

তিনি জানিয়েছেন, ভূমিকম্পের আগেও নির্বাচনের সময় নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না। কিন্তু এই মুহূর্তে ১৪ মে নির্বাচন করতে গুরুতর অসুবিধা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভূমিকম্পের পর উদ্ধার তৎপরতার ধীর গতি এবং অপর্যাপ্ত ত্রাণ দেওয়ার জন্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন এরদোয়ান। বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্লাটফর্মে সরকারের সমালোচনা করছেন।

এদিকে বিদেশে বসবাস করা তুর্কি সাংবাদিক জান দুন্দার বলেছেন, ‘১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পের বিপর্যয়ের পর এরদোয়ান ক্ষমতায় এসেছিলেন। আর ২০২৩ সালের ভূমিকম্প তাকে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করবে।'

উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পে ১৭ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন। তৎকালীন সরকার পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল। এরফলে ২০০২ সালের নির্বাচনে একেপি বিজয়ী হয়েছিল।