১৯৮৯: আজ আফগানিস্তান ছেড়েছিল সোভিয়েত সেনারা

৯ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে ১৯৮৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন। এর পরপরই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ে এবং তার আওতায় থাকা অঞ্চলগুলো স্বাধীন দেশে পরিণত হয়। খবর তোলোনিউজ।

১৯৮৯ সালে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন

আজ ১৫ ফেব্রুয়ারি আফগানিস্তান থেকে সাবেক সোভিয়েত বাহিনীর প্রত্যাহারের ৩৪তম বার্ষিকী। দিনটি আফগানিস্তানে সরকারি ছুটি হিসেবে গণ্য হয়।

৯ বছরের সোভিয়েত আগ্রাসন থেকে বেঁচে যাওয়া টোরিয়ালি বলেন, আফগানিস্তানে রুশ সৈন্যরা গণহত্যা চালিয়েছিল। রুশ হামলায় তার বাবা-চাচাদের সাত ভাইয়ের মধ্যে ছয়জনই নিহত হয়েছিলেন, যা তাদের পরিবারের জন্য একটি তিক্ত স্মৃতি।

বিষণ্ন সোভিয়েত সেনারা

সোভিয়েত হামলার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সাইয়েদ আহমদ বলেন, তারা গণহত্যা করেছিল, তারা ১০-১৫ জনকে বাগানে জড়ো হতে বাধ্য করতো, তারপর তাদের হত্যা করতো।

সোভিয়েত বাহিনীর নৃশংসতার আরেক প্রত্যক্ষদর্শী শের আহমদ জানান, একদিন একটি বিয়ের পার্টির পর সোভিয়েত সেনারা আমাদের বন্ধুদের গণহারে হত্যা করেছিল। আমরা ধ্বংসস্তূপ থেকে ৪০ জনের মরদেহ টেনে বের করেছিলাম।

আফগানিস্তানে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ৯ বছরের উপস্থিতি সে সময়ের শীর্ষ পরাশক্তিটিকে পতনের দিকে পরিচালিত করেছিল। তারা এই সময়ে প্রায় বিশ লাখ আফগান নাগরিককে হত্যা করেছিল। এছাড়া তাদের নির্যাতনে আরও বহু মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। এই যুদ্ধে সোভিয়েত বাহিনীরও কম ক্ষতি হয়নি। তাদের পক্ষেও ১৪ হাজার সেনা নিহত হয়েছিল। বিষয়টি সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ফেলেছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাঈদ আকবর আগা বলেন, ওই সংঘাতে রাশিয়ানদের পরাজয় খুবই সুস্পষ্ট ছিল। আমরা যদি আমেরিকানদের প্রত্যাহারের দিকে তাকাই, তাহলে তাদের পরাজয়ের বিষয়টি খুব একটা সুস্পষ্ট নয়। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষেত্রে তাদের পরাজয়টি সুস্পষ্ট ছিল। কারণ এর জেরেই তাদের শাসনাধীন সমস্ত জাতি স্বাধীন হয়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষক রহমতুল্লাহ বিজানপুর বলেন, সোভিয়েত বাহিনী আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালালে জাতিসংঘ এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ১৯৮০ সালের জানুয়ারিতে সংস্থার সাধারণ পরিষদে গৃহীত একটি প্রস্তাবে আফগানিস্তান থেকে এই সৈন্যদের অবিলম্বে ও নিঃশর্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়।

পরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ৫১ অনুচ্ছেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমর্থন হিসেবে আসা রাশিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং পশ্চিমাদের চাপের কারণে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। আজ থেকে ৩৪ বছর আগে ১৯৮৯ সালে সাবেক প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান থেকে সম্পূর্ণরূপে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। তবে এক্ষেত্রে অকুতোভয় আফগানিদের প্রবল প্রতিরোধেরও অনেক বড় ভূমিকা ছিল।

পরবর্তী সময়ে নাইন-ইলেভেনের সূত্র ধরে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে হামলা চালাতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী। ২০ বছর পর উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি ছাড়াই তারা আফগানিস্তান ত্যাগ করে। তালেবানের আল্টিমেটামের মুখে ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট তারা আফগানিস্তান পুরোপুরি ত্যাগ করে।