ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েল: নিউজিল্যান্ডে শিশুসহ নিহত ৪

নিউজিল্যান্ডে স্মরণকালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েলের ধ্বংসযজ্ঞ বেড়েই চলছে। দেশটির উত্তর দ্বীপজুড়ে বন্যা ও ভূমিধসে সবশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী শিশুসহ অন্তত চারজন নিহতের খবর জানিয়েছে কর্মকর্তারা। খবর বিবিসি।

ঘূর্ণিঝড়ে আটকে পড়াদের হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করা হচ্ছে

আজ বুধবার দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলগুলোর মধ্যে হকস বে-তে এক শিশুর মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এছাড়া বন্যায় বাড়ির ছাদে আটকা পড়া প্রায় ৩০০ মানুষকে হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করেছে উদ্ধারকর্মীরা।

তবে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে নর্থ আইল্যান্ড থেকে সরে গেলেও, বুধবার পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছে।

স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, 'ঝড়ের কবলে পড়ে অনেক বাসিন্দা নিখোঁজ রয়েছে। যাদের উদ্ধারে কাজ করছে পুলিশ।'

এরইমধ্যে দেশটির বেশিরভাগ অংশে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে। প্রত্যন্ত শহরগুলোতে বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

গেল মঙ্গলবার নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ক্রিস হিপকিন্স বলেছেন, গ্যাব্রিয়েলকে গেল শতাব্দীতে দেশটিতে আঘাত হানা সবচেয়ে বড় দুর্যোগ বলে অভিহিত করেছেন। দেশটির ৫০ লাখ জনসংখ্যার অন্তত এক তৃতীয়াংশ মানুষ ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকাগুলোতে বসবাস করেন।

ঝড়ের প্রভাবে দেশটির উত্তর দ্বীপের একবারে উত্তরে এবং পূর্ব উপকূলের কাছাকাছি বসবাসরত সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে হকস বে, কোরোম্যান্ডেল এবং নর্থল্যান্ডের মতো এলাকাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

নিউজিল্যান্ডের জরুরি ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী কিয়েরান ম্যাকঅ্যানাল্টি বলেছেন, প্রত্যন্ত কিছু শহরসহ একটি জনপ্রিয় পর্যটন নগরী হকের উপসাগরের পরিস্থিতির জন্য বিশেষ উদ্বেগের কারণ ছিল।

গেল সোমবার রাতে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে, দেশটির হকস বে-র পানির স্তর বেড়ে যায়। এ সময় বাসিন্দাদের বেডরুমের জানালা দিয়ে সাঁতার কেটে বাইরে আসতে দেখা গেছে।

দেশটির এক সামরিক মুখপাত্র বলেছেন, 'অনেক স্থানে বন্যার পানি বাড়ির দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত উঠে যায়। পরে সেখান থেকে আটকে পড়া বাসিন্দাদের উদ্ধার করা হয়েছে।'

পুলিশ জানিয়েছে, দেশটির হকস বে শহর অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারী নিজ বাড়িতে ভূমিধসে মারা গেছেন। আর এক শিশুকে উপকূলে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে শিশুটি পানিতে আটকে পড়েছিল।

এরআগে মঙ্গলবার অকল্যান্ডের পশ্চিমে ভূমিধসে আটকে পড়া একজন নিখোঁজ দমকলকর্মীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

বুধবার দেশটির সামরিক মুখপাত্র মি. ম্যাকঅ্যানাল্টি বলেছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়লেও; আশ্চর্যজনক হওয়ার কিছু থাকবে না। তবে উদ্ধারকর্মীদের অসাধারণ প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।

তিনি বলেছেন, হকস বে-তে বাড়ির ছাদে আটকে পড়া প্রায় ৩০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া বন্যার পানিতে ডুবে থাকা একটি বড় ভবন থেকে ৬০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

বুধবার পর্যন্ত দ্বীপজুড়ে ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ বিদ্যুৎবিহীন ছিল। এর মধ্যে ৮০ হাজার বাড়িতে বিদ্যুৎসংযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার বাসিন্দাদের জন্য পানি ও খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।