মক্কায় ক্রেন দুর্ঘটনা: বিনলাদিন গ্রুপকে ৫৮ কোটি টাকা জরিমানা

২০১৫ সালের হজের সময় হারাম শরীফে ক্রেন দুর্ঘটনার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সৌদি বিনলাদিন গ্রুপকে ২ কোটি রিয়াল (বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫৮ কোটি টাকা) জরিমানা করেছে মক্কার ফৌজদারি আপিল আদালত। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার জন্য সাতজনকে জেল ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

হজ মৌসুমে ক্রেন দুর্ঘটনায় ১০৮ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানি ও আড়াই শতাধিক মানুষ আহত হয়

আপিল আদালত সৌদি বিনলাদিন গ্রুপকে দায়িত্বে অবহেলা ও সুরক্ষাবিধি লঙ্ঘনের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছে। প্রতিষ্ঠানটিকে এজন্য ৫৮ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করা হয়েছে।

তবে ক্রেন দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে বিনলাদিন গ্রুপের কোনো ক্ষতিপূরণ বা ব্লাডমানি দিতে হবে না বলে আদালতের রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর হারাম শরীফ সম্প্রসারণ প্রকল্পে নিযুক্ত একটি ক্রেন ভেঙ্গে পড়লে হজ উপলক্ষে সেখানে সমবেত ১০৮ জনের প্রাণহানি ঘটে। এ ঘটনায় আহত হন আরও ২৩৮ জন।

বিনলাদিন গ্রুপকে জরিমানার পাশাপাশি মক্কার আপিল আদালত ক্রেন দুর্ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা ও সুরক্ষাবিধি লঙ্ঘনের দায়ে সাত ব্যক্তিকে সাজা ও অর্থদণ্ড দিয়েছে। এর মধ্যে চারজনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার রিয়াল (৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা) করে জরিমানা করা হয়েছে। অপর তিনজনকে তিন মাসের কারাদণ্ড ও ১৫ হাজার রিয়াল (৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা) করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে কোনো স্থগিতাদেশের আবেদন না করা হলে মক্কার আপিল আদালতের এ রায় চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।

২০১৫ সালে মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনার পর সৌদি কর্তৃপক্ষ ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হয়। এর জেরে দায়িত্বে অবহেলা ও সুরক্ষাবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ১৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

২০১৭ সালের ১ অক্টোবর মক্কার ফৌজদারি ১৩ অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস দেয়। এ সংক্রান্ত রায়ে বলা হয়, ক্রেন দুর্ঘটনার পেছনে মানুষের ভুল বা অবহেলা দায়ী ছিল না। ঝড় ও বজ্রপাতের কারণে দুর্ঘটনা হয়েছে।

২০১৭ সালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল হলে মামলাটি অন্য বিচারকের আদালতে স্থানান্তর করা হয়। ২০২০ সালে দেওয়া আরেকটি রায়ে ১৩ অভিযুক্তের সবাইকে এবং সেইসঙ্গে হারাম শরীফ সম্প্রসারণ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সৌদি বিনলাদিন গ্রুপকে সব অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধেও সরকারের পক্ষ থেকে আপিল করা হলে ২০২১ সালের ৪ আগস্ট আপিল আদালত আগের রায় বহাল রাখেন।

এরপর সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হলে সুপ্রিম কোর্টের ফার্স্ট সার্কিট আদালত মক্কার ফৌজদারি আদালত ও আপিল আদালতের পূর্ববর্তী সব রায় খারিজ করেন এবং সম্পূর্ণ নতুন বেঞ্চ গঠনের মাধ্যমে মামলাটি পুনরায় খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন।