যে মুহূর্তটি ভুলতে পারছেন না আলজেরীয় উদ্ধারকর্মী

আনুষ্ঠানিকভাবে তুরস্কে ভূমিকম্পে পুনরুদ্ধার কার্যক্রম সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত উদ্ধারকারীরাও আপাতত ফিরে গেছেন নিজ দেশে। তবে ব্যাপক বিধ্বংসী ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপ থেকে হতাহতদের উদ্ধারের ঘটনা ভুলতে পারছেন না তাদের অনেকেই। এমন একজন আলজেরীয় কর্নেল ফারুক আচৌর। ১১ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে তিন মাস বয়সী এক শিশুকে উদ্ধার করার মুহূর্তটি কিছুতেই ভুলতে পারছেন না তিনি। খবর আনাদোলু।

তিন মাসের শিশুকে উদ্ধার করছেন আলজেরীয় উদ্ধারকর্মীরা

গত সোমবার এক আলাপচারিতায় কর্নেল ফারুক আচৌর বলেন, তার নেতৃত্বাধীন উদ্ধারকারী দল আদিয়ামানে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসাবশেষ থেকে ১৩ জনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল।

আচৌর বলেন, আমাদের হাতে নষ্ট করার মতো এক মিনিট সময়ও ছিল না। আমার দেখা সবচেয়ে বিধ্বংসী এ ভূমিকম্পে শহরগুলো প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। আমরা এখানে কাজ করার সময় ভিনদেশে কাজ করছি এমন কোনো অনুভূতি আমাদের মধ্যে ছিল না।

আলজেরীয় টিম ও ফারুক আচৌর

উদ্ধার কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনায় আচৌর বলেন, ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত এলাকায় সমস্ত অনুসন্ধান এবং উদ্ধার প্রচেষ্টা তার দলের সদস্যদের ওপর গুরুতর মানসিক প্রভাব ফেলেছিল। যে কোনো উদ্ধার অভিযানে কমপক্ষে সাত ঘণ্টা সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে ধ্বংসাবশেষের অন্য প্রান্তে থাকা ব্যক্তিটির সাথে একটি সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যায়।

অশ্রুসিক্ত আচৌর বলেন, তার দলটি ধ্বংসস্তূপের নিচে থেকে একটি ৩ মাস বয়সী শিশুকে উদ্ধার করেছিল। কিন্তু সেখানে তার বাবা-মা প্রাণ হারায়। আমরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে শিশুটির কান্নার শব্দ শুনে তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু সফল হইনি। তখন আমরা আমাদের সমস্ত উপায়, অভিজ্ঞতা একত্রিত করে তাকে উদ্ধার করেছি। পরে একজন ডাক্তারের সাহায্যে আমরা তাকে খাওয়াতে পেরেছি। সে শিশুটিকে উদ্ধার করা আমাদের কাছে অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে বেশি মূল্যবান ছিল।

আচৌর বলেন, ভূমিকম্পের এক সপ্তাহ পরে আমরা ১৭ বছর বয়সী একটি মেয়েকেও উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এছাড়া ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে একজন বয়স্ক ব্যক্তিকেও উদ্ধার করেছি। উদ্ধার কাজ চলাকালেই তার সাথে আমাদের এমন সম্পর্ক হয়ে যায় যে, এক পর্যায়ে আমরা তাকে ‘দাদা’ বলে ডাকতে শুরু করি। প্রাথমিক চিকিৎসার পর সেই দাদা আবারও আমাদের কাছে চলে আসেন এবং উদ্ধারকাজ পরিচালনার সময় তিনি আমাদের সাথেই ছিলেন।

আলজেরিয়ান এই উদ্ধারকর্মী দোভাষী স্বেচ্ছাসেবকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, উদ্ধারকাজ চালানোর সময় তারা আমাদের দলকে অনেক সাহায্য করেছিলেন। তারা আমাদের তুর্কি ভাষার প্রয়োজনীয় কিছু মূল শব্দ শিখিয়ে দিয়েছিলেন। সেগুলো দিয়ে আমরা ধ্বংসস্তূপের নীচে থাকা লোকদের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছিলাম। আচৌর তুরস্কের দুর্যোগ সংস্থা, এএফএডি, তুর্কি রেড ক্রিসেন্টসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।

কর্নেল ফারুক আচৌরের নেতৃত্বাধীন ৮৬ সদস্যের শক্তিশালী আলজেরিয়ান অনুসন্ধান দলটি ১৪ ফেব্রুয়ারি আলজেরিয়ায় ফিরে যায়। আলজেরিয়া ভূমিকম্পের বিপর্যয়ের পরে তুরস্ককে একটি মেডিকেল মিশন, ৯৫ টন মানবিক সহায়তা এবং ৩০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা পাঠিয়েছে।