ক্ষুব্ধ, বিপর্যস্ত, লজ্জিত ম্যানইউ কোচ

রোববার রাতে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। এই ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হাগ জানালেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে তাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর ভালো ঘুম হয়েছিল তার। কে জানতো পরের দিন তার রাতের ঘুম কেড়ে নেবে লিভারপুল!

লিভারপুলের বিপক্ষে কোনো পরিকল্পনাই কাজে আসেনি এরিক টেন হাগের

গতকাল অ্যানফিল্ড স্টেডিয়ামে ডেকে এনে টেন হাগের ইউনাইটেডকে ৭-০ গোলে চূর্ণ করেছে ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুল। কে বলবে এই লিভারপুল গত সপ্তাহে চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে দুই গোলে এগিয়ে থেকে ৫-২ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয়েছিল! ফুটবল আসলে এমনই। অনিশ্চয়তায় ঠাসা।

সংবাদ সম্মেলনে ডাচ কোচের দাম্ভিক কথাবার্তায় বিশ্বজুড়ে চটেছেন রোনালদো ভক্তরা। সেটির জবাব লিভারপুল ম্যাচের পর সামাজিক যোগাযোগমাধমে দিচ্ছেন তারা। টেন হাগকে নিয়ে একেক জনের ভাষার প্রয়োগ, ঠাট্টার ধরনও আলাদা। কিন্তু উদ্দেশ্য সবারই এক। রোনালদোর সাবেক ডাচ কোচকে খোঁচা মারা!

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে নিয়ে স্রেফ ছেলেখেলা করেছে লিভারপুল

ওসব খোঁচাখুঁচি টেন হাগ পর্যন্ত পৌঁছেছে কিনা সেটি কার্যত বলা কঠিন। তবে লিভারপুলের বিপক্ষে হারটা যে তার দাম্ভিকতাকে চূর্ণ করে দিয়েছে সেটি স্পষ্ট। অথচ এই দলটাই কিনা কিছুদিন আগে প্রায় ছয় বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়ে জিতেছে ইংলিশ লিগ কাপের শিরোপা, কয়েক সপ্তহ ধরে ফর্ম আর আত্মবিশ্বাস ছিল বৃহস্পতির তুঙ্গে।

রেড ডেভিলসদের দর্পচূর্ণ হতে সময় লাগল স্রেফ দেড় ঘণ্টা। আরেকটু স্পষ্ট করে বললে ৪৫ মিনিট। লিভারপুলের মাঠে দ্বিতীয়ার্ধেই যে ছয় গোল হজম করেছে তারা। অথচ গোলবন্যার ম্যাচে ডেডলক ভেঙেছিল ৪৩ মিনিটে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বয়ে যাওয়া ঝড়টা চলল ম্যাচের প্রায় শেষলগ্ন পর্যন্ত।

এ সময়ে জোড়া গোল করেছেন কোডি গাকপো, ডরিন নুনেজ ও মোহাম্মদ সালাহ। পরে বেঞ্চ ছেড়ে উঠে এসে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন রবার্তো ফিরমিনো। প্রতিযোগিতার মঞ্চে এটাই রেড ডেভলিসদের যৌথভাবে সর্বোচ্চ বড় হার। অবিশ্বাস্য এই হারের পর ক্ষুব্ধ, বিপর্যস্ত এবং লজ্জিত টেন হাগ।

ম্যাচ পরবর্তী সংবদ সম্মেলনে হতবিহ্বল ডাচ কোচ যা বলেছেন তার চৌম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:

‘দ্বিতীয়ার্ধটা আমাদের ছিল না। আমাদের বোধগম্য ছিল না। আমরা একটা দল হিসেবে খেলতে পারিনি। অবশ্যই বিরতির পর দলের খেলা দেখে আমি ক্ষুব্ধ হয়েছি, অবাক হয়েছি। কারণ, গত কয়েক সপ্তাহ এবং মাসে আমরা দল হিসেবে খেলেছি এবং জয়ের মানসিকতা দেখিয়েছি।’

‘আমরা আমাদের পরিকল্পনা কাজে লাগাতে পারিনি। নিজেদের ভুলেই হেরেছি। আমাদের করণীয় কাজটা করতে পারিনি; লড়াইয়ে ফিরতে পারিনি। এটা সত্যি খুব অপেশারিত্ব ছিল। আমরা পেছনের কয়েকটি ম্যাচে (আগে গোল হজমের পর) ফিরে এসেছি। ব্রেন্টফোর্ডের পর ম্যানচেস্টার সিটি ম্যাচে পিছিয়ে থেকে জিতেছিলাম।’

‘এই হার আমাদের বেশ বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে এবং এটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইছি। আমি সত্যিই খুব হতাশ এবং খুব রাগ হচ্ছে। এটা হলো বাস্তবতার কঠিন পরীক্ষা। এটা আমাদের জন্য বড় একটা বার্তা। এটা সত্যিই খুব বাজে পারফরম্যান্স এবং আমরা এ বছরের সবচেয়ে বাজে খেলাটা খেলেছি।’

‘প্রথমার্ধের শেষ দিকেই আমরা ম্যাচটা হেরে গেছি এবং দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও গোল হজম করেছি। এই অবস্থায় আমাদের মাথা উঁচুতে রেখে লড়াই করা উচিত ছিল। কিন্তু আমরা সেটি পারিনি। আমাদের মধ্যে ছন্নছাড়া ভাব ছিল এবং আমরা গোল খেতে শুরু করি। এটা সত্যিই অপেশাদার এবং অপ্রয়োজনীয় পারফরম্যান্স ছিল।’

‘আপনাকে আপনার কাজটা করতে হবে। কিন্তু আমরা পারিনি। এটা তাদের (ভক্তদের) জন্য খুব কঠিন। তবে তাদেরকে ধন্যবাদ দিতে হবে (মাঠে আসার জন্য)। যখন তারা (গ্যালারি ছেড়ে) চলে যাচ্ছিল তখন আমরা তাদের দোষারোপ করতে পারি না। কারণ আমরা খুব বাজে খেলছিলাম। আজ আমি আমার সমর্থকদের কাছে লজ্জিত।’

অবশ্য টেন হাগের অধীনে এবারই প্রথম বিধ্বস্ত হয়নি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এর আগে ব্রেন্টফোর্ডের বিপক্ষে ৪-০ গোলে হেরেছিল তারা। পরে ম্যানচেস্টার ডার্বিতে সিটির বিপক্ষে হারতে হয়েছে ৬-৩ গোলে। ডাচ কোচ আসার আগেও গত মৌসুমে এই লিভারপুলের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছিল তারা। ইংলিশ লিগে দুই লেগে রেড ডেভিলসরা হজম করে ৯ গোল (৪-০ ও ৫-০)!