মাদক সম্রাটের পোষা জলহস্তী নিয়ে বিপাকে কলম্বিয়া!

কলম্বিয়ার কুখ্যাত মাদক সম্রাট পাবলো এসকোবারের পোষা ৭০টি জলহস্তীকে ভারত এবং মেক্সিকোতে স্থানান্তর করতে দেশটির সরকারকে প্রায় ৩৫ লাখ মার্কিন ডলার খরচ করতে হবে। সম্প্রতি কলম্বিয়ার কর্মকর্তারা এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য দিয়েছেন। খবর সিএনএন।

এসকোবারের পোষা জলহস্তী

বুধবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় অ্যান্টিওকিয়া সরকার, কলম্বিয়ার কৃষি ইনস্টিটিউট, কলম্বিয়ান এয়ার ফোর্স এবং মেক্সিকোর ওস্তক অভয়ারণ্যের মধ্যে করা একটি চুক্তি অনুযায়ী, ১০টি জলহস্তী মেক্সিকোতে পাঠানো হবে। বাকি ৬০টি জলহস্তী ভারতের অভয়ারণ্যে স্থানান্তরিত করা হবে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এসব জলহস্তীকে তাদের আদি বাসভূমি আফ্রিকায় ফেরত পাঠানো অসম্ভব, কারণ এতে সেখানকার স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রকে বিপর্যয়ে ফেলার ঝুঁকি রয়েছে। ফলে ভারত এবং মেক্সিকোর অভয়ারণ্য তাদের নতুন বাসস্থান হবে।

জলহস্তীগুলোকে মেক্সিকো এবং ভারতে পাঠানোর জন্য বিশাল বাক্স তৈরি করতে হবে। এছাড়া বিমানে করে পাঠাতেও অনেক অর্থ ব্যয় করতে হবে। ফলে সব মিলিয়ে কলম্বিয়া সরকারের ৩৫ লাখ ডলার খরচ হবে। গর্ভনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহার করে জলহস্তীদের জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। ফলে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটিকে বাধ্য হয়েই এই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হচ্ছে।

পাবলো এসকোবার

কলম্বিয়ার সরকারের মতে, এখন জলহস্তীর সংখ্যা ১৩০ থেকে ১৬০ এর মধ্যে রয়েছে। তারা এসকোবারের পরিত্যক্ত খামারবাড়ি হাসিয়েনদা নাপোলসের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। এসকোবার তার খামারে পোষার জন্য মাত্র ১টি পুরুষ এবং ৩টি নারী জলহস্তী নিয়ে এসেছিলেন। এরাই এখন বেড়ে ১৬০ টিতে দাঁড়িয়েছে।

উল্লেখ্য, মাদক সম্রাট পাবলো এসকোবার ১৯৮০ এর দশকে তার খামারে পালার জন্য বিদেশি বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু নিয়ে এসেছিলেন। এদের মধ্যে এই জলহস্তীগুলোও ছিল। ১৯৯৩ সালে পালাতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন এসকোবার। এরপর কর্তৃপক্ষ অন্যান্য প্রাণীদের বেশিরভাগ স্থানান্তরিত করেছিল। কিন্তু জলহস্তী অতিকায় প্রাণী হওয়ায় তাদের পরিবহন করা খুব কঠিন ছিল।

এদিকে এসকোবারের পোষা এই জলহস্তীগুলো দ্রুত বংশবিস্তার করতে শুরু করে। প্রাকৃতিক শিকারী থেকে মুক্ত এই প্রাণীগুলো খামার ছাড়িয়ে ম্যাগদালেনা নদীর অববাহিকা বরাবর ছড়িয়ে পড়েছে। তারা এখন পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। অতিকায় এই প্রাণীগুলো নিয়ে আশেপাশের বাসিন্দারাও চিন্তায় পড়ে গেছেন।

অ্যান্টিওকিয়া অঞ্চলের গভর্নর অ্যানিবাল গ্যাভিরিয়া বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা জলহস্তীদের জীবন বাঁচাতে চাচ্ছি। পাশাপাশি ম্যাগদালেনা মেডিও অঞ্চলের মানুষের জীবন রক্ষারও চেষ্টা করছি।'

সম্প্রতি কলম্বিয়ায় জলহস্তীগুলোকে একটি আক্রমণাত্মক প্রজাতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই জলহস্তীগুলো কৃষি এবং মানুষের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। পানিতে জলহস্তীর বর্জ্য অক্সিজেন স্তরের উপর প্রভাব ফেলে। এটি পানির গুণমান হ্রাস করতে পারে এবং ব্যাপক মাছের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।