আপনি পড়ছেন

পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম আন্ডারওয়াটার ড্রোনের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে উত্তর কোরিয়া। এর মধ্য দিয়ে দেশটি সম্ভাব্য যে কোনো যুদ্ধে এমন এক সামর্থ্যের জানান দিলো, যার তুলনা কেবল রাশিয়ার সঙ্গেই চলে। সমুদ্রের তলদেশ থেকে শত্রু দেশের নৌযান বা উপকূলকে লক্ষ্য করে পারমাণবিক হামলা চালানোর উপযোগী অস্ত্র এ মুহূর্তে কেবল রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার কাছেই আছে।

north korea tropedoহেইলি-২ পরীক্ষার বেশকিছু ছবি প্রকাশ করেছে কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি

শনিবার সকালে কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া গত ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে ৭ এপ্রিল শুক্রবার পর্যন্ত পারমাণবিক গোলা বহনে সক্ষম মনুষ্যবিহীন আক্রমণাত্মক অস্ত্র হেইলি-২-এর পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। ৭১ ঘণ্টা ৬ মিনিটে সমুদ্রের তলদেশে ১০০০ কিলোমিটার (৬২১ মাইল) দূরত্ব অতিক্রম করে নির্ধারিত টার্গেটে সফলভাবে আঘাত হেনেছে হেইলি-২।

গত সপ্তাহে হেইলি-১ আন্ডারওয়াটার ড্রোন পরীক্ষার কথা জানায় উত্তর কোরিয়া। এবার হেইলি-২ পরীক্ষার ছবিও প্রকাশ করেছে দেশটি। সবশেষ পরীক্ষায় উত্তর কোরিয়ার জলমগ্ন কৌশলগত অস্ত্রের নির্ভরযোগ্যতা ও বিধ্বংসী ক্ষমতা প্রমাণ হয়েছে বলে কেসিএনএ’র খবরে জানানো হয়।

কোরীয় ভাষায় হেইলি শব্দের অর্থ সুনামি। পারমাণবিক গোলার বাহনের এমন নাম হয়েছে অস্ত্রটির অন্তর্নিহিত সক্ষমতার কারণে। সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে শত্রুপক্ষের উপকূলের দিকে ধাবিত হয়ে নির্ধারিত লক্ষ্যের কাছে পৌঁছে পারমাণবিক সুনামি সৃষ্টি করাই এ অস্ত্রের সামর্থ্য ও লক্ষ্য।

এর আগে ২০১৮ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে পারমাণবিক গোলা বহনে সক্ষম পসিডন টর্পেডো প্রস্তুতের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, পসিডনের পাল্লা হবে অপরিসীম, এটা সাগরের চরম গভীরে কাজ চালাতে সক্ষম হবে এবং এর গতি যে কোনো সাবমেরিন অথবা টর্পেডোর চেয়ে বহুগুণ বেশি।

উত্তর কোরিয়ার হেইলি পুরোদস্তুর একটি আন্ডারওয়াটার ড্রোন। অন্যদিকে রাশিয়ার পসিডন হচ্ছে আন্ডারওয়াটার ড্রোন ও টর্পেডোর মিশেল। একেকটি পসিডন ২৪ মিটার দীর্ঘ, যার কিনা নিজস্ব পাওয়ার সিস্টেম রয়েছে। যে কোনো সাবমেরিন অথবা নৌযান থেকে ছোঁড়ার পর লক্ষ্যবস্তুর কাছে পৌঁছতে নিজের মতো করেই গতিপথ ও বাঁকবদল করতে পারে পসিডন।

ন্যাটোর বিশেষজ্ঞরা পসিডনের নাম দিয়েছেন ক্যানিয়ন। এটা এমন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র, যে নিজস্ব ক্ষুদে পারমাণবিক জেনারেটর থেকে শক্তি নিয়ে সীমাহীন দূরত্ব পেরোতে পারে। পসিডনের আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের পুরোটাকেই মুহূর্তে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করতে পারে বলে পশ্চিমা বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

জানুয়ারি মাসে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে,পসিডন টর্পেডোর প্রথম ব্যাচের প্রস্তুতকাজ শেষ হয়েছে এবং এসব অস্ত্র পারমাণবিক অস্ত্রবাহী বেলগোরদ সাবমেরিনে সংযোজন করা হবে। পসিডন ছুড়ে প্রতিপক্ষের কৃত্রিম বিমানবাহী রণতরী ধ্বংস এবং উপকূল রেখায় আঘাত হানার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে রুশ মন্ত্রণালয়।

পসিডনের সঙ্গে তুলনা করলে হেইলিকে একই জাতের কিছুটা অনগ্রসর সংস্করণ বলতে হবে। পসিডনের মতো নিজস্ব পাওয়ার সিস্টেম হেইলির নেই। তবে পসিডনের মতো হেইলিও নিজের মতো করে ম্যানুভার করতে পারে। ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি ও উদ্ভাবনে উত্তর কোরিয়ার সরকারের যে প্রবল আগ্রহ, তাতে শীঘ্রই তারা হেইলিকে আরও সক্ষম অস্ত্রে পরিণত করবে, এমন আশঙ্কা করা যায়।

পসিডন ও হেইলির মতো অস্ত্র এখনো যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার না হলেও এ ধরনকর অস্ত্র তৈরির ধারণাটি কয়েক দশক আগের। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্ট্যালিন তার দেশের সামরিক চিন্তক ও গবেষকদের কাছে এমন অস্ত্র চেয়েছিলেন যাতে যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলরেখা বরাবর সব অবকাঠামোকে নিমেষে ধ্বংস করে দেওয়া যায়। পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম টর্পেডোর ধারণা এসেছিল এখান থেকেই।

ভূমি থেকে অথবা আকাশ থেকে নিক্ষেপযোগ্য পারমাণবিক মিসাইল শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষামূলক মিসাইল সিস্টেমে আটকা পড়তে পারে। তবে পানির নিচ দিয়ে পারমাণবিক ওয়ারহেড বা গোলা বহনে সক্ষম দূরপাল্লার বাহন তৈরি করতে পারলে কাজটি করা সম্ভব।

সোভিয়েত রণকৌশল প্রণেতারা ভেবেছিলেন, সোভিয়েন ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিস্তৃত জলরাশিকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়া যেতে পারে। কেননা এসব আন্ডারওয়াটার ক্যারিয়ার কোনো র‌্যাডারের চোখে ধরা পড়বে না। পানির নিচে সন্দেহজনক চলাচল শনাক্তের জন্য ব্যবহৃত উচ্চশক্তির সেন্সর ও শ্রবণযন্ত্র সুনারকেও ফাঁকি দেওয়া যাবে একটু কৌশলী হলে। পসিডন যে কোনো জলমগ্ন র‌্যাডার, সুনার ও সেন্সরকে ফাঁকি দিতে পারে বলে রুশ কর্মকর্তাদের দাবি। হেইলিও একই রকম সক্ষমতা রাখে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.