তলিয়ে যেতে পারে সেন্টমার্টিন, বাঁচার আকুতি বাসিন্দাদের
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
ঘূর্ণিঝড় মোখার কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সেন্টমার্টিন দ্বীপের বড় একটি অংশ সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের আজ দুপুরের ছবি, ফেসবুক থেকে নেওয়া
১৩ মে, শনিবার দুপুর ৩টায় দেওয়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মডেল পূর্বাভাসের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছেন আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ইউনিয়নের মডেল পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের পুরোটা কক্সবাজার জেলার উপর দিয়ে অতিক্রম করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এতে সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া, ও মহেশখালী দ্বীপের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপন্ন। রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে বন্যা, ভূমিধস, ও প্রাণহানীর আশঙ্কা রয়েছে।
এছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপের বড় একটি অংশ সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের ভূ-কাঠামোর স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেন্টমার্টীন দ্বীপে আটকে পড়া মানুষদের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়ে যাবে, যদি না তারা ২য় তলা বিল্ডিংয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে না থাকে।
শনিবার সকালে ১১টায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও আমেরিকার পূর্বাভাস মডেলের বরাতে মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ২১২ কিলোমিটার, যা দমকা হওয়ার গতিবেগে ঘণ্টায় ২৫৯ কিলোমিটার বৃদ্ধি পেতে পারে।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের চারপাশে সমুদ্রে ৪৯ ফুট উচ্চতার ঢেউ সৃষ্টি হচ্ছে। এটি ঘণ্টায় ১১ কিলোমিটার গতিবেগে সামনের দিকে এগোচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশের স্থলভাগে প্রথম যে স্থানটিতে আঘাত করতে পারে তা হলো সেন্টমার্টিন দ্বীপ।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক বিজ্ঞানী ড. আবদুল মান্নান বলেন, মোখার প্রভাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপ পানির নিচে চলে যাবে, এটা নিশ্চিত। তবে সেটা স্থায়ীভাবে নয়। পাঁচ থেকে সাত ফুট জলোচ্ছ্বাস হলেতো এমনিতেই সেন্টমার্টিন দ্বীপ ভেসে থাকার কথা নয়।
এদিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে এখনও অনেক বাসিন্দা আছেন বলে জানা গেছে। দ্বীপটি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় তারা দ্বীপে থেকে যেতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানা গেছে। তারা এখন বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন, নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার আকুতি জানিয়েছেন।
সেন্টমার্টিনের এক বাসিন্দা মাহিম চৌধুরী। তিনি সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফে চলে এসেছেন। তার ধারণা, প্রায় ৩ হাজার মানুষ সেন্টমার্টিন ছেড়েছেন। এখনও অনেক মানুষ সেন্টমার্টিনে আছেন।
টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেছেন, সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় সেন্টমার্টিন থেকে আর কাউকে সরিয়ে আনা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, আমরা কাউকে সেন্টমার্টিন থেকে সরিয়ে নেইনি। যারা টেকনাফে গেছেন তারা নিজ উদ্যোগে গিয়েছেন। সেন্ট মার্টিনে প্রায় ৮ হাজার মানুষ বসবাস করেন।
এদিকে দুপুরে সেন্টমার্টিন থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়ে মোহম্মদ আমির হোসেন আপন নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, আমরা সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষগুলো বাঁচতে চাই। স্থানীয় ট্রলার, স্প্রীড বোট, ফিসিং বোট যা ছিল তা দিয়ে যারা যেভাবে যেতে পেরেছে টেকনাফ চলে গিয়েছে। বর্তমানে নৌযানের অভাবে আটকা পড়েছে দ্বীপের হাজার হাজার মানুষ। তাদের চিৎকার কেউ শুনছে না।
আবহাওয়া পূর্বাভাস বলছে, সেন্টমার্টিনে সবচেয়ে বেশি আঘাত হানবে ঘূর্ণিঝড় মোখা। টেকনাফ ঘাটে কেয়ারীর ২টি জাহাজ আছে, বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের বড় বড় হাই স্পীড বোট আছে। চাইলে এসব নৌযান দিয়ে দ্বীপের মানুষদের সরিয়ে নিতে পারে।
সেন্টমার্টিনের আরেক বাসিন্দা সাংবাদিক ও আইনজীবী কাফায়েত খান মার্টিন লিখেছেন, ‘আমরা সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষজন বাঁচতে চাই। কিন্তু কোন ট্রলার বা যানবাহন না থাকায় দ্বীপের মধ্যেই আটকা পড়ে আছে প্রায় ৯ হাজার মানুষ। এবারের ঘূর্ণিঝড়টি সেন্টমার্টিন দ্বীপের উপর ভয়াবহ তাণ্ডব চালাতে পারে। মাইকে ঘোষণা দিয়ে মানুষদেরকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বললেও ট্রলার বা যানবাহন সংকটে কেউ নিরাপদ স্থানে যেতে পারছে না। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো ধরনের উদ্যোগ দেখছি না।
এদিকে আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রবর্তী অংশ সেন্টমার্টিন দ্বীপ অতিক্রম শুরু করার সম্ভাবনা শনিবার দিবাগত রাত ৩টার পর থেকে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও কক্সবাজার জেলা অতিক্রম করার সম্ভাবনা বেশি বেশি রোববার সকাল ৭টা থেকে দুপুর ৩টার মধ্যে। দ্বীপের উপর ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাব পুরোপুরি কেটে যেতে রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, কক্সবাজার উপকূলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১০ থেকে ১২ ফুট, বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে ৮ থেকে ১২ ফুট ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে ৭ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
এছাড়া এই ঘূর্ণিঝড়টি রোহিঙ্গাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজারের ওপর দিয়ে অতিক্রম করলে টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। রোহিঙ্গাদের জন্য বৃষ্টি, বন্যা থেকে শুরু করে পাহাড় ধসের প্রবল ঝুঁকি রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘরগুলো উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.