যেভাবে নিষেধাজ্ঞা দেয় চীন

রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করা চীনা কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা চিন্তা করে, তখন চীন কীভাবে এই ধরনের পদক্ষেপগুলোর প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে সেটি বোঝাও গুরুত্বপূর্ণ। দ্য মার্কেটর ইনস্টিটিউট ফর চায়না স্টাডিজে (মেরিকস) এ কথা লিখেছেন বিশ্লেষক ফ্রান্সেসকা ঘেরেত্তি।

প্রতীকী ছবি

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোম্পানি ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চীন যে ক্রমবর্ধমান নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে তার সাম্প্রতিক উদাহরণ দিয়েছেন ঘেরেত্তি। একটি হলো ২০২২ সালের আগস্টে তাইওয়ান সফরের কারণে লিথুয়ানিয়ার পরিবহন ও যোগাযোগ উপমন্ত্রী আগ্নে ভাইসিউকেভিসিউতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় চীন। এর আট মাস পর তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের সঙ্গে সাক্ষাতের জেরে মার্কিন কংগ্রেসম্যান মাইকেল ম্যাককলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটি।

এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় চীনে ম্যাককলের যেকোন সম্পদ ও সম্পত্তি জব্দের নির্দেশনা রয়েছে। সেইসঙ্গে দেশের সংস্থা ও ব্যক্তিদের সঙ্গে তার লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। অস্পষ্ট বিষয়গুলো এবং আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার শঙ্কা তৈরি করে, যা অন্যদেশগুলোকে চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ থেকে বিরত রাখে। যাইহোক চীনের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার একটি প্যাটার্ন শনাক্ত করেছেন বিশ্লেষক ফ্রান্সেসকা ঘেরেত্তি।

তিনি বলেছেন, অর্থনৈতিক জোর জবরদস্তিতে প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য পদক্ষেপের তুলনায় আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা চীনের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। এর একটি বড় কারণ হলো একতরফা নিষেধাজ্ঞা খেলায় চীন তুলনামূলকভাবে নতুন খেলোয়াড়। দেশটি সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা গ্রহণের জন্য নীতি সরঞ্জাম তৈরি করা শুরু করেছে। নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য দেশটির এখন আরও শক্ত আইনি কাঠামো রয়েছে। সেইসঙ্গে আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি ঘন ঘন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। সেই সময়টি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। সে সময় চীন অন্য দেশের বিরুদ্ধে যে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে সেটি তখনও প্রকৃতপক্ষে নিষেধাজ্ঞা ছিল না। ২০২১ সালে জিনজিয়াংয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ছিল আরেকটি মাইলফলক। ওই নিষেধাজ্ঞার জবাবে চীন খুব দ্রুত পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এবং বিদেশি নিষেধাজ্ঞা বিরোধ আইনে সেসময় একটি নতুন আইনি কাঠামো তৈরি করেছে।

কখন নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে, কাকে ও কোন কোম্পানিকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হবে, সেই সঙ্গে কী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিচক্ষণতা তৈরি করে দেয় চীনের বিদেশি নিষেধাজ্ঞা বিরোধ আইন ও অন্যান্য নীতিগুলো।

ঘেরেত্তি বলেন, চীনের সঙ্গে যুক্ত এখনকার ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞা প্রণয়নের ক্ষেত্রে চীনের পন্থা আরও ভালোভাবে বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, চীন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকেই শিখেছে। এরপর পশ্চিমাদের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা চীনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ধারণা পাল্টে দিয়েছে।

চীন কীভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তা গ্রাফিক্স চিত্রে মেরিকসে ব্যাখ্যা করেছেন এই বিশ্লেষক। এতে চীনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পথপরিক্রমাও তুলে ধরেছেন তিনি।