পি কে হালদারের কুমির খামার নিলামে বিক্রি

নিলামে বিক্রি হয়ে গেল আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের মালিকানাধীন কুমিরের খামার। ময়মনসিংহের ভালুকায় গড়ে ওঠা দেশের এই প্রথম কুমির খামার ‘রেপটাইলস ফার্মস লিমিটেড’ কিনে নিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা উদ্দীপন। বর্তমানে ৩ হাজার ৭০০টি কুমিরের খামারটি বিক্রি হয়েছে ৩৮ কোটি টাকায়।

ময়মনসিংহের ভালুকায় কুমির খামার

ময়মনসিংহের ভালুকায় ২০০৩ সালে ১৩. ৮ একর জমিজুড়ে দেশের প্রথম কুমির খামার চালু করেছিলেন লেখক মুশতাক আহমেদ। তার এই খামার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল কুমিরের চামড়া রপ্তানি। প্রতিষ্ঠানটির মূলধন ছিল ৫ কোটি টাকা। মুশতাক আহমেদের কাছ থেকে ২০১৩ সালে কুমিরের খামারটি কিনে নেন পি কে হালদার।

পিকে হালদারের সহযোগীরা খামার সম্প্রসারণ করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড থেকে ৫৭ কোটি টাকা ঋণ নেয়। জামানত হিসেবে বন্ধক রাখা হয় খামারের জমি। তবে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের দায় নিয়ে ২০১৯ সালে পালিয়ে যান পি কে হালদার। ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে তার কুমির খামার।

পি কে ভারতে আটকের পর হাইকোর্টের নির্দেশে কুমির খামার পরিচালনার জন্য ছয় সদস্যের বোর্ড গঠন করা হয়। খামারটি টিকিয়ে রাখতে একপর্যায়ে আরও ঋণ দেয় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। তবে চলতি বছর ঋণের টাকা আদায়ে খামারটি নিলামেই তোলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে রেপটাইলস ফার্মসের ঋণ ছিল ১১০ কোটি টাকা। নিলামে সর্বোচ্চ দাম দিয়ে খামারটির মালিকানা পেয়েছে উদ্দীপন। এরইমধ্যে আট কোটি টাকা দিয়ে খামারটি বুঝে নিতে শুরু করেছে তারা।

কুমির খামারটির আসল মালিক পি কে হালদার হলেও কাগজপত্রে চেয়ারম্যান হিসেবে সিমু রায় ও এমডি পদে রাজীব সোমের নাম রয়েছে। সম্পর্কে তারা স্বামী-স্ত্রী। পি কে হালদার পালিয়ে যাওয়ার পর এই দম্পতিও দেশ ছেড়ে কানাডায় পাড়ি জমান। ২০২০ সালে কানাডা চলে যাওয়ার আগে রাজীব সোম জানিয়েছিলেন, কুমির খামারটিতে তারা মূলত পি কে হালদারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন।

খামারটির মালিকানা ৩৮ কোটি টাকায় হস্তান্তর হলেও ঋণের বাকি টাকা আদায় করতে নথিপত্রে থাকা মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা চালু থাকবে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্বে) মো. মশিউর রহমান বলেন, মূল্যমান আনুমানিক ৪ কোটি টাকা হলেও পর্যটনের সম্ভাবনাময় খামারটি বিক্রি হয়েছে ৩৮ কোটি টাকায়।

রেপটাইলস ফার্মসের কর্মকর্তারা জানান, খামারটি থেকে এ পর্যন্ত ১৫০৭টি কুমিরের চামড়া রপ্তানি হয়েছে জাপানে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটি কুমিরের চামড়ার দাম ৫০০ থেকে ৬০০ ডলার। মালয়েশিয়া থেকে ২০০৪ সালে আমদানি করা ৭৫টি কুমির নিয়ে খামারটির যাত্রা শুরু। খামারটিতে বর্তমানে কুমির রয়েছে ৩ হাজার ৭০০টি।