প্রধানমন্ত্রী: আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে, এটা তাদের ইচ্ছা

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞার ওপর প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন যে এই নিষেধাজ্ঞার কোনো যৌক্তিকতা নেই। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান শতরূপা বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াশিংটন সফরের সময় এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। সাক্ষাৎকারের একটি ভিডিও রেকর্ডিং ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা আমার প্রশ্ন যে তারা কেন ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের চেষ্টা করছে?’

‘তারা যদি মানবাধিকার ও ভোটাধিকারের কথা বলে, তাহলে আমরাই আওয়ামী লীগ, যারা বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকারের জন্য লড়াই করেছি। ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আমাদের অনেক মানুষ রক্ত ঝরিয়েছে। আমরা সব ধরনের কাজ করেছি। সংস্কার—ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, জনগণকে তাদের ভোটাধিকার সম্পর্কে সংবেদনশীল করা- যাতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, `আমি যাকে খুশি তাকেই ভোট দেবো' স্লোগানটি আমার তৈরি করা। আমি এভাবেই মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছি। সামরিক স্বৈরশাসকরা আমাদের দেশে বেশির ভাগ সময় শাসন করেছে। তখন জনগণকে ভোট দিতে হতো না। তারা (কর্তৃপক্ষ) ব্যালট বাক্স নিয়েছিল এবং ফলাফল ঘোষণা করেছিল। আমরা এই ধরনের প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি এবং নির্বাচনের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছি। মানুষ এখন ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। আমরা তা করেছি। তাই আমরা মনে করি না। হঠাৎ করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কোনো যৌক্তিকতা আছে।'

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। গত ২৪ মে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছিল।

এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।

র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে যারা অপরাধ করে, সে র‌্যাব, পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থাই হোক, তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। কোনো অপরাধের জন্য শাস্তি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কেন স্যাংশনের প্রয়োজন হয়?’

শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশে সব নির্বাচনই অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেন, ‘সেসব নির্বাচনে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। অনেকেই এই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ ভোটাধিকার নিয়ে সবসময়ই সচেতন। তারা কোনো ভোট চোরকে ক্ষমতায় থাকতে দেবে না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে কারচুপি করলেও দেড় মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেননি।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ২০০৬ সালে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা তৈরি করে ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকতে চেয়েছিল।

মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার ইস্যুতে ফিরে এসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং ভবিষ্যতে তারা আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। এটা তাদের ইচ্ছা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে এবং বেকারত্ব কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে বাংলাদেশিরা আমেরিকায় আসতে পারবে না। তাই হোক। আমাদের দেশে এখন যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। তাহলে দেখা যাক, তারা কী করে এবং কেন তাদের এই নিষেধাজ্ঞা।’