আইসিসিতে যোগ দিতে চায় আর্মেনিয়া, ক্ষুব্ধ রাশিয়া

আর্মেনিয়ান আইনপ্রণেতারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) যোগদানের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছেন। ৩ অক্টোবর, মঙ্গলবার আর্মেনিয়ার পার্লামেন্ট আইসিসির রোম সংবিধি অনুমোদন করেছে। এর ফলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দেশটির ঐতিহ্যবাহী মিত্র রাশিয়া।

আর্মেনিয়ার পার্লামেন্ট

আর্মেনিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরমেনপ্রেস জানিয়েছে, আইনপ্রণেতাদের দ্বারা অনুমোদিত নথিটি দেশটির প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর করবেন। এরপর অভ্যন্তরীণ রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে এটি কার্যকর হবে।

রাশিয়া আর্মেনিয়ার এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছে। রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের চুক্তিটি অনুমোদন করা ভুল ছিল।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের দৃষ্টিকোণ থেকে, রোম সংবিধিতে আর্মেনিয়ার সমর্থন দেওয়া সঠিক কিনা আমরা সন্দেহ করছি। আমরা এখনও বিশ্বাস করি যে এটি ভুল সিদ্ধান্ত।' 

গত মার্চ মাসে ইউক্রেনের যুদ্ধ এবং ইউক্রেনীয় শিশুদের অবৈধভাবে রাশিয়ায় পাঠানোর জন্য প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আইসিসি। এর ফলে পুতিন আইসিসির সদস্যভুক্ত কোনো দেশে গেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। এই আশংকায় চলতি বছর ব্রিকস এবং জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেননি তিনি। তার পরিবর্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভকে তার প্রতিনিধি হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারত পাঠিয়েছেন। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ব্রিকস সম্মেলন দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জি-২০ সম্মেলন ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়।     

মঙ্গলবার আর্মেনিয়ার পার্লামেন্টে অনুষ্ঠিত ভোটে আইসিসিতে যোগদানের পক্ষে ৬০ ভোট পড়েছে। অপরদিকে বিপক্ষে পড়েছে ২২ ভোট। আর্মেনিয়ার এই পদক্ষেপের ফলে রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

এদিকে আজারবাইজানের সঙ্গে আর্মেনিয়ার দীর্ঘস্থায়ী দ্বন্দ্বের বিষয়ে রাশিয়ার নিষ্ক্রিয়তার জন্য ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাসিনিয়ান।নাগর্নো-কারাবাখের স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্রে রাশিয়ান শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।

গত মাসে আজারবাইজানীয় বাহিনী নাগর্নো-কারাবাখের আর্মেনিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পরাজিত করে অঞ্চলটি দখল করে নেয়। যদিও কারাবাখে রুশ শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন রয়েছে তারপরেও আজারবাইজান নিজেদের এই অঞ্চল দখল নিতে সক্ষম হয়। গত তিন দশক ধরে কারাবাখ অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করছিল আর্মেনিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদীরা।   

উল্লেখ্য, নাগর্নো কারাবাখ নিয়ে আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার মধ্যে দুইবার যুদ্ধ হয়। ১৯৯১ সালে আর্মেনিয়ার সামরিক বাহিনীর সহায়তায় আর্মেনিয়ান বিচ্ছিন্নতাবাদীরা অঞ্চলটি দখল করেছিল। এরপর তারা নাগর্নো-কারাবাখ প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে। ২০২২ সালে দুই দেশ আবারও যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ৪৪ দিনের যুদ্ধে কারাবাখের কিছু অঞ্চল উদ্ধার করতে পারে আজারবাইজান। সে সময় রাশিয়ার মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছিল আর্মেনিয়া আজারবাইজান। এরপর এই অঞ্চলে রাশিয়ার ২ হাজার শান্তিরক্ষী মোতায়েন করা হয়।

সূত্র: এএফপি