প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ অ্যাটর্নি জেনারেল, অতঃপর

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন হাইকোর্টের একজন বিচারপতির বক্তব্যের বিষয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যেখানে তিনি বলেছেন, “দেশটাকে তো জাহান্নান বানিয়ে ফেলেছেন”।

এ এম আমিন উদ্দিন

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে সংবিধান রক্ষার শপথ নেওয়া একজন বিচারপতি এরকম অসাংবিধানিক কিছু বলেছেন। এর মাধ্যমে বিচারপতি তার শপথ ভঙ্গ করেছেন বলে মনে করেন তিনি।

মঙ্গলবার সকালে অধিকার সংস্থা অধিকারের সচিব আদিলুর রহমান খান ও এর পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনের করা আপিলের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে শুনানিকালে বিচারপতি এমদাদুল হক আজাদ এ কথা বলেন।

এ বিষয়ে দুপুরে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বিচারপতি এমদাদুল হক আজাদের মন্তব্য নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

পরে সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিষয়টি জানার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। পরে আমি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করি এবং এই ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কপি তাকে দিয়েছি।

এক দশক আগে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় দায়ের করা মামলায় ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদিলুর ও নাসিরকে দুই বছর করে কারাদণ্ড দেয়।

আদালত তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন, অনাদায়ে আরও এক মাস কারাভোগ করতে হবে।

আদিলুর ও নাসির ২৫ সেপ্টেম্বর সাজার বিরুদ্ধে আপিল করে জামিন চান। এই বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের একটি বেঞ্চ শুনানি করে।

আসামিপক্ষে এ জে মোহাম্মদ আলী, রুহুল আমিন ভূঁইয়া ও মোঃ আহসানুজ্জামান ফাহিম এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম।

আদালতে মামলাটি শুানানির জণ্য উঠলে সিনিয়র আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী এগিয়ে যান (যেখানে শুনানির সময় আইনজীবীরা দাঁড়িয়ে থাকেন)। এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তার আসন থেকে উঠে বললেন, আমাদেরও কিছু বলার আছে।

আদালত তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “তাকে আগে কথা বলতে দিন। এত তাড়াতাড়ি সিট থেকে লাফিয়ে উঠছেন কেন? দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।

পরে এজে মোহাম্মদ আলী বলেন, আইসিটি আইনে দায়ের করা মামলায় আপিলকারীদের দুই বছরের কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

"কেন?" আদালত জিজ্ঞাসা. এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ৫৭ (২) ধারায় সাজা দেওয়া হয়েছে।

এরপর আদালত জিজ্ঞাসা করেন, আপনি কি জামিনের আবেদন করেছেন? এ জে মোহাম্মদ আলী ইতিবাচক সাড়া দেন।

শুনানিতে অংশ নিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম বলেন, তাদের (আদিলুর ও নাসির) বিরুদ্ধে ভুল তথ্য, নেতিবাচক প্রচার ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।

আদালত তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে জিজ্ঞাসা করেন, “তাহলে আপনি কেন তাদের ছোট করে সাজা দিলেন? তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া উচিত ছিল। আপনি কেন তাদের মাত্র দুই বছরের সাজা দিলেন?

পরে আদালত আদিলুর ও নাসিরের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে একই সঙ্গে জরিমানার আদেশ স্থগিত করে তাদের জামিন দেন।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা জানান, হাইকোর্টের আদেশের ফলে আদিলুর ও নাসিরের মুক্তিতে কোনো আইনি বাধা নেই।

২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান সম্পর্কে মিথ্যা প্রতিবেদন ও ভুল তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে আদিলুর ও নাসিরের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়।

সবশেষ

এ ঘটনায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বিচারপতি এমদাদুল হক আজাদকে ডেকে কথা বলেছেন। তাকে কথাবার্তার ক্ষেত্রে যত্নশীল হতে বলেছেন তিনি।