যে কারণে এখনো ধ্বংসস্তূপে থাকছেন গাজার অধিবাসীরা
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার বোমা হামলায় গাজার ৬০ শতাংশের বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাকিগুলোও যে কোনো মুহূর্তে হামলার শিকার হতে পারে। ইসরায়েলি বাহিনী বারবার গাজার বাসিন্দাদের বাড়িঘর ছেড়ে চলে যেতে বলছে। কিন্তু তারপরও অনেকে সেই ধ্বংসস্তূপেই রয়ে গেছেন। কারণ তাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। খবর আল জাজিরা।
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া বাড়িতেই নাতিকে নিয়ে খেলায় মেতেছেন খালেদ
৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১০ কিলোমিটার প্রস্থের গাজা উপত্যকায় বসবাস ছিল ২৩ লাখ মানুষের। এটি আবার উত্তর গাজা ও দক্ষিণ গাজায় বিভক্ত। ইসরায়েলিরা পুরো গাজা উপত্যকাকেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছে। তারা ঘোষণা দিয়েছে, উত্তর গাজার লোকজন যেন তাদের এলাকা ছেড়ে চলে যায়। কখনো তাদের দক্ষিণ অংশে সরে যাওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে।
কিন্তু গাজাবাসী তাদের নির্দেশমতো যাওয়ার পর নিরাপদ থাকতে পারবে, এমন গ্যারান্টি কেউ দেয়নি। ফলে গাজা থেকে সরে যাওয়ার সময়, সরে গিয়ে হাসপাতালে, স্কুলে আশ্রয় নেওয়ার পর, দক্ষিণে সরে যাওয়ার পরও ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে। আবার উত্তর গাজা থেকে সরে গিয়ে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পর দেখা গেছে, সেখানে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। নতুন করে কারো থাকার জায়গা সেখানে নেই। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে আবার ফিরে এসেছেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া নিজেদের বাড়িতেই।
রান্নাঘরের পাশে খালেদের পরিবারের খাবারের আয়োজন
এমনই এক পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করেন সিহাম নাজি নামের এক নারী, যার বাড়ি ছিল গাজা উপত্যকার দেইর আল-বালাহ নামক স্থানে। তিনি বলেন, গাজা ইসরায়েলি হামলার তৃতীয় দিনে তিনি তার স্বামী খালেদের সঙ্গে বসে ছিলেন। এ সময় পানি আনতে রান্নাঘরে যান। সে সময়ই পাশের বাড়িতে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। তবে সে হামলার ধাক্কায় নাজির বাড়িও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
সিহাম বলেন, আমি যেন মুহূর্তে নিজেকে জাহান্নামের মধ্যে দেখতে পেলাম। চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেছে, বাতাস বন্ধ হয়ে গেছে, চারদিকে ধুলোয় ভরা এবং কানে কেবল ধ্বংসের শব্দ। তাড়াতাড়ি করে স্বামীর কাছে ফিরে গিয়ে তিনি দেখেন, তার শরীরের অর্ধেক ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। তার মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। পরে ছেলে ও অন্যদের সহায়তায় তাকে মুক্ত করতে সক্ষম হন।
এরপরপরই তারা সেখান থেকে বের হয়ে যান। প্রায় ১০ দিন ধরে তারা বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়ের জন্য দৌড়াদৌড়ি করেন। প্রথমে একটি স্কুলে আশ্রয় নেওযার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সেখানকার পরিস্থিতি অসহনীয় বলে মনে হয়েছিল। কোনো পানি, বিদ্যুৎ নেই। ন্যূনতম গোপনীয়তাও নেই। পরে তারা আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সেখানকার পরিস্থিতিও কমবেশি একই।
এ অবস্থায় নাজির পরিবার তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা মনে করেন, নিজের বাড়ির ধ্বংসাবশেষও তাদের জন্য এর চেয়ে ভালো হবে। ওই বাড়িতে এখন দরজা জানালা নেই। বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর করা। তবে আশ্রয়কেন্দ্রের চেয়ে ভালো মনে হয়েছে।
খালেদ বলেন, আমরা আর কোথায় যাব? ওইসব আশ্রয়কেন্দ্রে গেলে আমার সন্তানরা ইসরায়েলি আক্রমণে মারা না গেলেও তারা ঠান্ডায় অথবা কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে। তাই আমি তাঁবুতে থাকার চেয়ে মর্যাদার সঙ্গে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমার বাড়িতেই মরতে চাই।
খালেদ বলেন, বছরের পর বছর ধরে আমরা কষ্ট করে এই বাড়িটি তৈরি করেছিলাম। এটিই ছিল আমাদের প্রাসাদ। এতে দুটি বসার ঘর, তিনটি শয়নকক্ষ, একটি রান্নাঘর, একটি বড় বাথরুম ছিল। দ্বিতীয় তলায় তার বিবাহিত ছেলের জন্য একটি অসমাপ্ত অ্যাপার্টমেন্ট ছিল। আমার পুরো জীবন ও স্বপ্ন এই বাড়িতে ছিল। আমাদের একটি বাগান ছিল। বাড়ির সামনের জায়গায় আমরা বাচ্চাদের জন্য একটি ছোট সুইমিং পুল তৈরিরও পরিকল্পনা করেছিলাম
তবে এত কিছুর পরও হাল ছাড়তে নারাজ খালেদ ও তার পরিবার। তারা বলেন, আশা করি আমরা আমাদের বাড়িটি পুনর্র্নিমাণ করতে সক্ষম হব এবং এটিকে আগের চেয়ে আরও ভালো করতে পারব।
গাজায় খালেদের মতো এমন পরিবারের সংখ্যা হাজার হাজার।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.
360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.
Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.