পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমল টানা দুই মাস

অর্থনীতির বাজে পরিস্থিতির মধ্যেই টানা দুই মাস পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হারিয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ নভেম্বর মাসে বিশ্ববাজারে ৪৭৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এটি আগের বছরের নভেম্বরের তুলনায় ৬.০৫ শতাংশ কম। আগের মাস অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৩৭৬ কোটি ডলারের পণ্য। যা আগের বছরের অক্টোবরের তুলনায় ১৩.৬৪ শতাংশ কম। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ নথি বিশ্লেষণে বিষয়টি দেখা গেছে।

রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি নেই টানা দুই মাস

ইপিবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের নভেম্বরে ৪৭৮ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৫০৯ কোটি ২৬ লাখ ডলারের পণ্য। চলতি বছরের অক্টোবরে রপ্তানি হয় ৩৭৬ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য, যা ২০২২ সালের একই মাসের তুলনায় ১৩. ৬৪ শতাংশ কম।

যদিও চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাস- জুলাইয়ে ১৫ শতাংশ, আগস্টে ১৪ শতাংশ ও সেপ্টেম্বরে ১৫ শতাংশ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। 

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, নভেম্বরের রপ্তানি পণ্য যোগ করে চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ২২৩ কোটি ডলারের পণ্য। এটি গত পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি কম হয়েছে ৯ শতাংশ।

টানা দুই মাস পণ্য রপ্তানি কমে যাওয়ায় সামগ্রিক রপ্তানি আয়ের গতিও কমে গেছে। চলতি ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই–অক্টোবর) পণ্য রপ্তানিতে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ছিল ৩.৫০ শতাংশ। কিন্তু নভেম্বর মাসে রপ্তানি কমে যাওয়ায় পাঁচ মাসের হিসাবে (জুলাই–নভেম্বর) আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ের (জুলাই–নভেম্বর) তুলনায় প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১.৩০ শতাংশে।

প্রসঙ্গত, গত ২০২২–২৩ অর্থবছরে মোট ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার।

ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক (আরএমজি) ছাড়া বেশিরভাগ পণ্যের রপ্তানি কমে গেছে। এর মধ্যে হিমায়িত খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, প্রকৌশল পণ্য ইত্যাদিতে কমেছে সবচেয়ে বেশি।

তৈরি পোশাকের উদ্যোক্তারা বলছেন, পোশাক খাতেও রপ্তানি ক্রয়াদেশ কমে যাচ্ছে। রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে সেই প্রভাবই স্পষ্ট।

ইপিবির তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ১৮৮৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২.৭৫ শতাংশ বেশি। তবে আলোচ্য সময়ে নিট পোশাক রপ্তানি ৮. ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে ওভেন পোশাক রপ্তানি কমেছে ৪.৫০ শতাংশ।

বিষয়টি নিয়ে বিজিএমইএ’র মুখপাত্র মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বৈশ্বিক যুদ্ধবিগ্রহ ও দেশে হারতাল-অবরোধসহ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে টানা দুই মাস ধরে রপ্তানি আয় কমছে।

তিনি বলেন, সময়ে-অসময়ে শ্রমিক অসন্তোষসহ অনিশ্চয়তা পোশাক খাতের পিছু ছাড়ছে না কোনোভাবেই। সেই কারণে আন্তর্জাতিক চাপ এবং যেভাবে অর্ডার কমছে, সেই তুলনায় এ খাতে রপ্তানি ভালো এখনও ভালো অবস্থানেই রয়েছে।