৪৮ ঘণ্টায় গাজায় ১৪ ইসরায়েলি সেনা নিহত

সপ্তাহান্তে গাজা উপত্যকার যুদ্ধে ১৪ ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর, রোববার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, অক্টোবরের শেষের দিকে স্থল আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এই দুই দিন যুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিনগুলোর মধ্যে একটি ছিল।

বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা

২২ ডিসেম্বর, শুক্রবার এবং ২৩ ডিসেম্বর, শনিবার মধ্য ও দক্ষিণ গাজার যুদ্ধে ১৪ ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়েছে। এই ঘটনা থেকে এই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে হামাস এখনও ইসরায়েলি সৈন্যদের অগ্রসর হওয়ার পথে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।   

ইসরায়েলি আর্মি রেডিও জানিয়েছে, গাড়িতে ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে চার সেনা নিহত হয়। অন্যরা পৃথক, বিক্ষিপ্ত লড়াইয়ে নিহত হয়েছে।

লেবাননের শিয়া গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর গুলিতে উত্তর ইসরায়েলে আরেক সৈন্য নিহত হয়েছে। গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে সীমান্তে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা। এর ফলে বিস্তৃত আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

গাজা উপত্যকায় স্থল আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে নিহত ইসরায়েলি সৈন্যের সংখ্যা ১৫৩ তে পৌঁছেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রোববার মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেছেন, ‘যুদ্ধের জন্য আমাদের অনেক বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে। তবে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই।'  

সৈন্যদের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার কারণে গাজা যুদ্ধের প্রতি ইসরায়েলি জনসমর্থন কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের ফলে ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়। এছাড়া ২৪০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর ফলে হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছিলেন নেতানিয়াহু।

এদিকে গাজা উপত্যকায় আড়াই মাস ধরে চলা এই যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনী ২০ হাজার ৪০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এদের মধ্যে ৮ হাজারের বেশি শিশু রয়েছে। অবরুদ্ধ এই ছিটমহলের ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

হামাসের শাসন ও সামরিক সক্ষমতাকে চূর্ণ করার এবং অবশিষ্ট ১২৯ জিম্মিকে মুক্তি করার জন্য ইসরায়েলি বাহিনী এখনও গাজা উপত্যকায় বোমাবর্ষণ করে চলেছে। ফিলিস্তিনিদের মৃতের সংখ্যা বাড়ার কারণে ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে নেতানিয়াহু তার অবস্থানে এখনও অনড় আছেন।  

উল্লেখ্য, সৈন্যদের মৃত্যু ইসরায়েলে একটি সংবেদনশীল এবং আবেগপূর্ণ বিষয়। কারণ দেশটির ইহুদি নাগরিকদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। ইসরায়েলি মিডিয়ায় মৃত সৈনিকদের নাম প্রতি ঘন্টায় প্রচার করা হচ্ছে। মাত্র ৯০ লাখ মানুষের ছোট এই দেশে কার্যত প্রতিটি পরিবার একজন আত্মীয়, বন্ধু বা সহকর্মীকে জানে যারা যুদ্ধে পরিবারের একজন সদস্যকে হারিয়েছে।

সূত্র: এবিসি নিউজ