ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা, ইন্দোনেশিয়ার সমর্থন!

ইন্দোনেশিয়ার সুশীল সমাজের বেশ কয়েকটি সংগঠন এবং অ্যাক্টিভিস্টরা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা একটি মামলার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এই মামলায় গাজায় ফিলিস্তিনিদের হত্যা করার জন্য ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

ইসরায়েলের পতাকা

ইন্দোনেশিয়ার সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উল্লেখ করেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকানরা দীর্ঘদিন ধরে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। তারা ফিলিস্তিনিদের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে। একইভাবে, ইন্দোনেশিয়াও ফিলিস্তিনের কট্টর সমর্থক। ইন্দোনেশিয়ার সংবিধানে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি সমর্থন জানানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর মাধ্যমে উপনিবেশবাদের বিলুপ্তির আহ্বান জানানো হয়েছে।    

ইন্দোনেশিয়ার মেডিকেল ইমার্জেন্সি রেসকিউ কমিটির (এমইআর-সি) চেয়ারম্যান ডাঃ সারবিনি মুরাদ আরব নিউজকে বলেছেন, ‘আমরা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে টেনে আনার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার এই পদক্ষেপকে সমর্থন করি।' 

তিনি যোগ করেছেন, ‘ইসরায়েলকে অবশ্যই আইসিজেতে নিয়ে যেতে হবে। কারণ ইসরায়েল যা করছে তা গণহত্যা। অবশ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে ইসরায়েলি চাপের মধ্যেও সাহস এবং দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করতে হবে আইসিজেকে। আমরা আশা করি যুদ্ধ শেষ হবে এবং ফিলিস্তিনে শান্তি আসবে।' 

এমইআর-সি হল জাকার্তাভিত্তিক একটি সংস্থা যা উত্তর গাজার ইন্দোনেশিয়া হাসপাতালের উন্নয়নে অর্থায়ন করেছে। অক্টোবরের শুরুতে অবরুদ্ধ ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এই স্থাপনাটি। গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে প্রায় ২২ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৫৭ হাজারের বেশি আহত হয়েছে।

পশ্চিম জাভাভিত্তিক একটি মুসলিম সংগঠন জামাহ মুসলিমিনও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়টিকে একটি সাহসী পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে সংগঠনটি।  

এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, ‘জামাহ মুসলিমিন ইন্দোনেশিয়ার মত অন্যান্য দেশগুলোকেও আসিয়ান, ওআইসি এবং জাতিসংঘের মত সংস্থাগুলোকে  চাপ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। ফিলিস্তিনে গণহত্যার অপরাধ বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।'       

সেসেপ জসিম নভেম্বরের শেষের দিকে পশ্চিম জাভাতে গাজার পক্ষে হাজার হাজার মানুষের একটি বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন। তিনি আরব নিউজকে বলেছেন, ‘ইসরায়েল সকল সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তাই আমরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে পূর্ণ সমর্থন করি এবং আশা করি আন্তর্জাতিক আদালত অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বাহিনী যে গণহত্যা করছে তা বন্ধ করতে জরুরি পদক্ষেপ নেবে।'  

এদিকে ২৯ ডিসেম্বর, শুক্রবার আইসিজেতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা দায়ের করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটি বলেছে, ইসরায়েল গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তেল আবিবের আচরণ জেনোসাইড কনভেনশনের অধীনে তার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করছে।  

ইসরায়েলকে গাজায় তাদের সামরিক অভিযান অবিলম্বে স্থগিত করার জন্য একটি অন্তর্বর্তী আদেশ জারি করতে আদালতের প্রতি অনুরোধ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সেই অনুরোধের শুনানি হতে পারে। যদিও মামলাটি চালাতে কয়েক বছর সময় লাগতে পারে, তবে একটি অন্তর্বর্তী আদেশ সপ্তাহখানেকের মধ্যে জারি করা যেতে পারে। 

উল্লেখ্য, নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিজে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত। যদিও এই আদালতের আদেশ আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক তবে কোনো রাষ্ট্রকে এর আদেশ মানতে বাধ্য করা যায় না। ফলে প্রায় সময়ই আদালতটির আদেশ উপেক্ষা করা হয়। 

সূত্র: আরব নিউজ