হজ নিবন্ধন: দুই দফা সময় বাড়িয়েও কোটার ৫৮ শতাংশ খালি

দুই দফা সময় বাড়িয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) শেষ হলো চলতি মৌসুমের হজ নিবন্ধন। এরপরও কোটার ৫৮ শতাংশ খালি থেকে গেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অনেক আগেই দেশের হজযাত্রীর সংখ্যা সৌদি আরবকে জানানোর কথা ছিল। তারপরও দুই দফা সময় বাড়ানো হয়েছে। এখন আর নিবন্ধনের সময় বাড়ানো সম্ভব নয়। কোটা খালি থাকায় পরবর্তী সময়ে কোটার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হজ

চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে এ বছরের ১৬ জুন (১৪৪৫ হিজরি সনের ৯ জিলহজ) পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। প্রাপ্ত কোটা অনুযায়ী জানানো হয়েছিল, গত বছরের মতো এবারও বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার ১৯৮ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১৭ হাজার জনের হজ পালনের সুযোগ ছিল।

গত ১৫ নভেম্বর থেকে হজযাত্রীদের নিবন্ধন শুরু হয়। প্রথমে নিবন্ধনের সময় বেধে দেওয়া হয় ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় নিবন্ধনের সময় বাড়িয়ে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। তবে তাতেও হজযাত্রীদের সাড়া না পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় নিবন্ধনের সময় বাড়িয়ে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়।

হজ পোর্টালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত হজের জন্য নিবন্ধন করেছেন মোট ৫৩ হাজার ১১৫ জন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিবন্ধন করেছেন তিন হাজার ৮০২ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪৯ হাজার ৩১৩ জন। শতকরা হিসেবে কোটার ৪২ শতাংশ হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন। বাকি রয়েছে কোটার ৭৪ হাজার ৮৩ জন। অর্থাৎ দুই দফা মেয়াদ বাড়ানোর পরও কোটার ৫৮ শতাংশ খালি রয়ে গেছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ প্রসঙ্গে জানান, সৌদি আরবের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশিরভাগ দেশই তাদের হজযাত্রীর সংখ্যা জানিয়ে দিয়েছে। ফলে তাদের জন্য এরই মধ্যে মিনাসহ অন্যান্য স্থানে জায়গা নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত হজযাত্রীর সংখ্যা জানাতে না পারায় তাদের জন্য জায়গাও বরাদ্দ হয়নি। আরও দেরি করলে মিনায় অনেক দূরে তাঁবু বরাদ্দ করা হবে। ফলে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের ভোগান্তি বাড়বে। তাই কোটা খালি থাকলেও নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো সম্ভব নয়।

ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বলেন, নিবন্ধনের সময় আর বাড়াব না, এটাই সিদ্ধান্ত। সৌদি আরব সব দেশকে হজযাত্রীর সংখ্যা জানাতে বলছে, কিন্তু সেটি জানাতে পারছি না। নিবন্ধনের সময় আরও বাড়ালে মিনায় আর জায়গা পাওয়া যাবে না। পরে হজযাত্রীদের কষ্ট হলে সবাই গালাগালি করবে।

তিনি আরও বলেন, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া মিনায় জায়গা পেয়ে গেছে। আমরাই একমাত্র দেশ, যারা এখন পর্যন্ত হজযাত্রীদের সংখ্যা জানাতে পারিনি। দুই দফা বাড়িয়ে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছি। আর সম্ভব নয়, আমরা আগামী সপ্তাহেই সৌদি আরবকে হজযাত্রীর সংখ্যা জানিয়ে দেবো।

কোটার বেশিরভাগই খালি থাকায় ভবিষ্যতে সমস্যা হবে কিনা এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, প্রভাব তো কিছুটা পড়বে। বিষয়টি নিয়ে আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করব। সরকার তো টাকা দিয়ে হজযাত্রী পাঠাতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি মন্তব্য করেন, নভেম্বর থেকে নিবন্ধন শুরু করার পর দুবার সময় বাড়িয়েছি। হজের খরচও গত বছরের চেয়ে কমিয়ে দিয়েছি।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিবন্ধন সম্পর্কে জানান, অনানুষ্ঠানিকভাবে আরও কিছু হজযাত্রীর নিবন্ধন হতে পারে। অনেকে হয়ত টাকা জমা দিয়েছে, পোস্টিং হতে সময় লাগছে। তাদের নিবন্ধন সম্পন্ন হলে সবমিলিয়ে হজযাত্রীর সংখ্যা আরও কিছুটা বাড়বে।

এদিকে বেসরকারি হজ নিবন্ধনকারী এজেন্সি মালিকরা জানান, নির্বাচনসহ রাজনৈতিক অস্থিরতায় গত বছরের শেষ সময়টা পার হয়েছে। বেশির ভাগ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। ফলে হজের খরচ কিছুটা কমলেও সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সেটা হজে গমনেচ্ছুদের এখনও সাধ্যের বাইরে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারিভাবে এ বছর হজে যেতে সাধারণ প্যাকেজে পাঁচ লাখ ৭৮ হাজার ৮৪০ টাকা এবং বিশেষ হজ প্যাকেজে নয় লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে এজেন্সিগুলোর মাধ্যমে সাধারণ প্যাকেজে সর্বনিম্ন পাঁচ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা এবং বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে ছয় লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা খরচ হবে। সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার সব হজযাত্রীকে কোরবানির খরচ আলাদাভাবে দিতে হবে।