আগামী বাজেটে সুদের বরাদ্দ ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা, ৫ বছর আগের চেয়ে দ্বিগুণ!

আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে স্থানীয় ও বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার সম্ভাবনা রয়েছে, যা পাঁচ বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের লোগো

এর মধ্যে স্থানীয় ঋণের সুদ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ ২ হাজার কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী আগামী ৬ জুন সংসদে বাজেট পেশ করবেন।

প্রত্যাশিত রাজস্ব আদায় না হওয়ায় সরকার বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। একই সঙ্গে উন্নয়ন ব্যয় মেটানোরও চাপ রয়েছে। ফলে ঋণের বিপরীতে বিপুল পরিমাণ সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হার বৃদ্ধি এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ণ সুদ পরিশোধের বরাদ্দ বাড়ানোর আরও দুটি কারণ।

আগামী বাজেটের আকার ধরা হচ্ছে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা, যার মধ্যে ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সুদ পরিশোধে বরাদ্দ ছিল ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের হিসাবে, এই বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয় এবং সংশোধিত বাজেটে এটি বাড়িয়ে ১ লাখ ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ ৯ লাখ ৫৩ হাজার ৮১৪ কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ ৭ লাখ ৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকা।

গত চার বছরে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে সীমাবদ্ধ ছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি মাস থেকে বাজারভিত্তিক সুদের হার চালু করেছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ইতোমধ্যে সুদের হার ১৭ শতাংশে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সুদের হার ১৪ শতাংশের মধ্যে রাখার পরামর্শ দিয়েছে। সরকারি ট্রেজারি বিলের সুদের হার এখন ১১ থেকে ১২ শতাংশ। এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগ মনে করছে, আগামী বাজেটে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ১ লাখ ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।

গত ফেব্রুয়ারিতে অর্থ বিভাগকে লেখা এক চিঠিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী জানান, সরকার বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং এর জন্য অতিরিক্ত ঋণ নেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে অতিরিক্ত ঋণও দেওয়া হচ্ছে।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ. মনসুর বলেন, ‘আমার মনে হয় ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা সুদ পরিশোধের জন্য যথেষ্ট হবে না। সুদ বাবদ ব্যয় আরও বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চীন ও রাশিয়া থেকে ঋণ নেওয়ার কারণেও সুদ পরিশোধের বরাদ্দ বাড়বে। আমি পরামর্শ দেবো সস্তা বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার।’

কোথায় সুদ দিতে হবে

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছরের মতো আগামী বাজেটেও সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে বড় অংকের অর্থ ব্যয় হবে। এই পরিমাণ প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা হতে পারে, যা চলতি অর্থবছরে ৪২ হাজার কোটি টাকা।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সুদ বরাদ্দ রাখা হবে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগের বিপরীতে। এই অঙ্ক ৩৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে, যা চলতি অর্থবছরের বরাদ্দের তুলনায় কিছুটা বেশি।

বৈদেশিক ঋণের সুদ বাবদ বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী বাজেটে প্রায় দ্বিগুণ হবে।

ঋণ ব্যবস্থাপনা কি ঠিক আছে?

নগদ অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে অর্থ বিভাগ। প্রতি তিন মাস অন্তর অর্থ বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে নগদ অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সভা অনুষ্ঠানের কথা।

এই সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) এবং জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকেন। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই সভা সময়মতো হয় না এবং সিদ্ধান্তগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকারকে অতিরিক্ত ঋণ নিতে হচ্ছে, তাই সুদ ব্যয়ও বাড়বে।

সাবেক সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, একদিকে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ণ হয়েছে, অন্যদিকে সব ধরনের ঋণের সুদ বেড়েছে। তাই ঋণের সুদ ব্যয় বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে বিপুল পরিমাণ বকেয়া পরিশোধ করা হয়নি এবং সেগুলো আগামী অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে।

প্রথম আলো থেকে অনুদিত