টিআইবি: ক্ষমতার অপব্যবহার বেনজিরের মতো ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ তৈরি করছে

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজির আহমেদের বিরুদ্ধে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যিনি ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অভিযুক্ত।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের লোগো

টিআইবি জোর দিয়ে বলেছে যে, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দ্বারা অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতার অপব্যবহার "ফ্রাঙ্কেনস্টাইন-সদৃশ ব্যক্তিত্ব" তৈরি করে এবং রাষ্ট্রের জবাবদিহিতাকে দুর্বল করে।

সংস্থাটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ধরনের অপব্যবহারে সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে এবং সাবেক পুলিশ প্রধানের দ্বারা জমি বিক্রি করতে বাধ্য হওয়া ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক আইজিপি মূলত সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে জমি বিক্রিতে বাধ্য করার জন্য ভয় দেখানো এবং জিম্মি করার মতো কৌশল অবলম্বন করেছেন। এসব কাজে তিনি নিজের এবং অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সংস্থার কর্মীদের ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, সরকার বেনজির আহমেদের দুর্নীতি এবং তার বিপুল পরিমাণ সম্পদের বিষয়ে কিছুই জানত না – এ দাবি মেনে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান পরিস্থিতিকে অতিশয় উদ্বেগজনক বলে বর্ণনা করেছেন, যেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগসাজশ করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জমি জোরপূর্বক অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ নিয়মতান্ত্রিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে প্রধান আসামির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

সাবেক আইজিপির দুর্নীতির চলমান তদন্তে তার অবৈধ সম্পদের বিষয়ে নতুন তথ্য উদঘাটন হয়েছে। ইফতেখারুজ্জামান প্রশ্ন তুলেছেন, এত গুরুতর অভিযোগের মধ্যে কীভাবে বেনজির আহমেদ এবং তার পরিবার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন।

তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে সাবেক পুলিশ প্রধান দেশ ত্যাগের আগে ব্যাংক থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ তুলে নিয়েছেন, যা বিদেশে অর্থ পাচারে ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশ বা সহায়তার সন্দেহ জাগিয়ে তুলেছে।

ইফতেখারুজ্জামান জোর দিয়ে বলেন যে, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে শুধু সাবেক আইজিপিকেই নয়, বরং তাকে যারা সহায়তা করেছিল তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তিনি সাবেক পুলিশ প্রধানের কর্মকাণ্ডের প্রতি সরকারের নজরদারির অভাবের সমালোচনা করেছেন। এমনকি তিনি তার দুর্নীতিকে সরকারের मिलीভगत বা সক্রিয় উৎসাহ হিসেবেও অভিহিত করেছেন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক দুর্নীতিতে জড়িত সকল ব্যক্তির নাম প্রকাশের আহ্বান জানান এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার প্রতি সরকারের অঙ্গীকার প্রদর্শনের জন্য জড়িত সকলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে, ব্যর্থতা কেবল নাগরিকদের মধ্যে সরকারের দুর্নীতি বিরোধী প্রচেষ্টাকে নাটকীয়তা হিসেবে বিবেচনা করার ধারণাকে জোরদার করবে।

তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের মতে, সরকার সব দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি সম্পর্কে তথ্য রাখে। এই ধরনের স্বীকারোক্তি বিরল হলেও, সরকারকে অবশ্যই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে যে, কীভাবে একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা এতটা কুখ্যাত দুর্নীতির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছিলেন। দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ এবং জড়িত সকলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার প্রতি সরকারের অঙ্গীকার প্রদর্শন করার জন্য অপরিহার্য। এটি করতে ব্যর্থ হলে নাগরিকদের মধ্যে এমন অঙ্গীকারকে কেবল নাটকীয়তা হিসেবে বিবেচনা করার ধারণাকে জোরদার করবে।’