চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা: আপাতত হাইকোর্টের রায় বহাল, শুনানি স্থগিত

সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের হাইকোর্টের রায়কে বেআইনি ঘোষণার দাবি জানিয়ে করা এক রিট আবেদনের শুনানি স্থগিত করেছে আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার (৪ জুলাই) এই আদেশ দেন।

হাইকোর্টের ছবি

আদালত রাষ্ট্রপক্ষকে বলেন, ‘আপাতত হাইকোর্টের রায় কার্যকর থাকবে। পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর আপনারা রেগুলার আপিল করতে পারবেন।’

এ সময় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান প্রশ্ন তোলেন, ‘রাস্তায় বিক্ষোভ করে কি সুপ্রিম কোর্টের রায় বদলানো যায়?’

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। অন্যদিকে, রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোতাওয়ার হোসেন সাজু।

আইনজীবী মোতাওয়ার হোসেন সাজু বলেন, ‘আপিল বিভাগে পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় বহাল থাকবে।’

উল্লেখ্য, ৫ জুন হাইকোর্টের রায়ের পর থেকেই কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

আদালতের আদেশের পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের আন্দোলন এখন আরও জোরদার হবে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। কোটা পুনর্বহালের রায় মেধার অবমাননা। সংগ্রামের মাধ্যমে কিভাবে অধিকার আদায় করতে হয় তা শিক্ষার্থীরা জানে।’

২০১৮ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নবম গ্রেড এবং দশম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেডে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ১০% নারী কোটা, ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ১০% জেলা কোটা বাতিল করে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নবম গ্রেড (পূর্বে প্রথম শ্রেণি) এবং দশম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেডের (পূর্বে দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে।

এই প্রজ্ঞাপনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনীদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি আহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন।

রিট আবেদনকারীরা বলেন, নবম গ্রেড এবং দশম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেডে মুক্তিযোদ্ধাদের ৩০ শতাংশ কোটা বাতিল করে চতুর্দশ থেকে বিংশ গ্রেডে স্থানান্তর করা হয়েছে, যা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মের প্রতি অবমাননাকর।

২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের চ্যালেঞ্জ করে করা রিট আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিঞা ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল জারি করেন।

রুলে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা প্রজ্ঞাপন কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।

পরবর্তীতে, ২০২৪ সালের ৫ জুন চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৮ সালের সরকারি প্রজ্ঞাপনটি বাতিল ঘোষণা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করলে তিনিও হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ৪ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করেন।