বিচ্ছিন্ন সেন্ট মার্টিন, তীব্র খাদ্য সংকট

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাথে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের নৌ যোগাযোগ এখনও স্বাভাবিক হয়নি, যার ফলে দ্বীপের প্রায় দশ হাজার বাসিন্দা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির তীব্র সংকটে ভুগছেন। বিগত কয়েকদিন ধরে বিকল্প পথে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটিতে পণ্য পরিবহন করা হচ্ছিল, কিন্তু ২২ জুন থেকে সেই পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে।

ফাইল ছবি

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান এবং সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ দ্বীপবাসীর এই দুর্ভোগের কথা নিশ্চিত করেছেন।

আব্দুর রশিদ জানান, ২২ জুন ‘এসবি নাইম’ ও ‘এসবি মেয়ের দোয়া’ নামে দুটি ট্রলার বিকল্প পথে সেন্ট মার্টিনে পণ্য সরবরাহ করে। এসব পণ্যের মধ্যে ছিল তিন শতাধিক গ্যাস সিলিন্ডার, খাদ্যদ্রব্য এবং ১০-১২ জন যাত্রী। এছাড়াও দুটি স্পিডবোটে করে দ্বীপ থেকে ১৫ জন রোগীসহ যাত্রী শাহপরীর দ্বীপে আসেন।

এই প্রতিবাদক সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ট্রলার মালিক ও সাধারণ মানুষসহ প্রায় ৫০ জনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। তারা জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাত নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই, কিন্তু নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের জীবনযাত্রা চরম দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

উল্লেখ্য, গত ৮ জুন থেকে টেকনাফ ও সেন্ট মার্টিনের মধ্যে সকল প্রকার নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এর আগে ৫ ও ৮ জুন নাফ নদীর মোহনায় নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় মিয়ানমার থেকে ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। যদিও এতে কেউ হতাহত হয়নি, তবে ট্রলারটিতে সাতটি গুলি লেগেছিল। ওই ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসন এ পথে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয়। এরপর কর্তৃপক্ষ শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকাম এলাকার 'গোলগোরা' হয়ে বিকল্প পথে যাতায়াতের অনুমতি দেয়। তবে সেন্ট মার্টিন সার্ভিস ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রশিদ জানান, পথটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে মালিকরা এই পথ ব্যবহার করতে চান না।

দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত

দ্বীপটিতে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে - একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং অপরটি সেন্ট মার্টিন বিএন ইসলামিয়া স্কুল এন্ড কলেজ।

প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে মোট ২০৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারীর ৭টি পদ থাকলেও বর্তমানে ৩ জন শিক্ষক ও ১ জন কর্মচারী রয়েছেন। বিএন ইসলামিয়া স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩০০ জনেরও বেশি এবং শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন ১৩ জন।

ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে ১৩ জুন দুটি স্কুল বন্ধ হওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষক দ্বীপ ছেড়ে চলে যান। কিন্তু যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় শিক্ষকরা এখন আর স্কুলে ফিরতে পারছেন না।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আক্তার কামাল বলেন, ‘দ্বীপের মানুষ ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে। কোনোমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। তারপরও আমাদের সন্তানরা যদি শিক্ষার সুযোগ পেত তাহলে কিছুটা সান্ত্বনা পাওয়া যেত। কিন্তু শিক্ষক সংকটের কারণে তাদের লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে।’

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের তীব্র সংকট

বিকল্প পথও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দ্বীপবাসী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির তীব্র সংকটে ভুগছে।

দ্বীপের প্রধান বাজার জেটি ঘাট সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে কয়েক শ দোকানপাট ও রেস্তোরাঁ। জানা গেছে, অধিকাংশ দোকানেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত নেই। কিছু দোকানে সামান্য কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থাকলেও তা চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল বাজারের উত্তর ও দক্ষিণ পাশের কিছু দোকানে ডিম পাওয়া যায়নি। এক সপ্তাহ আগেও একটি ডিম বিক্রি হয়েছে ২৫ টাকায়। এক কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায় এবং প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়।

মো. হোসেন নামে এক মুদি দোকানি জানান, নৌপথ বন্ধ থাকায় টেকনাফ থেকে পণ্য সরবরাহ আসছে না। তিনি গত ২২ জুন সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডিম ও চাল কিনে গোডাউনে মজুত রেখেছিলেন। মানুষের কষ্ট দেখে তিনি এখন সেই মজুত পণ্যই বিক্রি করছেন।

তিনি বলেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে দ্বীপের মানুষ অনাহারে মারা যাবে।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপের সাথে নৌ যোগাযোগ বন্ধ থাকায় পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে।

‘নৌকা চলাচল স্বাভাবিক করতে স্থানীয় প্রশাসনকে নাফ নদীর বদরমোকাম এলাকায় কোস্ট গার্ড এবং বিজিবির টহল জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে চর জেগে উঠার কারণে বদরমোকাম এলাকায় খনন কার্যক্রম পরিচালনা করাও জরুরি।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আদনান চৌধুরী জানান, খাদ্য সংকট নিরসনে ট্রলারগুলোকে নাফ নদীর বদলে বঙ্গোপসাগরের টেকনাফ উপকূল দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যেতে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ট্রলার মালিকরা সমুদ্র উত্তাল থাকায় ওই পথ ব্যবহার করছে না।

তিনি আরও জানান, সংকট সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

প্রথম আলো থেকে অনুদিত