এমবাপ্পের ফ্রান্সকে বিদায় করল স্পেন

 দুর্দান্ত এক গোল করে ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে গেল ফ্রান্স। পাল্টা জবাব দিয়ে দ্রুতই ঘুরে দাঁড়াল স্পেন। সমতায় ফেরার পর কয়েক মিনিটের মধ্যে লিডও নিলো লা রোজারা। জমে ওঠে ম্যাচ। উত্তেজনার রেণু ছড়ানো মহারণে শেষ পর্যন্ত হাসি ফুটবল স্পেনের মুখে। দায় নিলো কিলিয়ান এমবাপ্পের বিবর্ণ ফ্রান্স।

বল দখলের লড়াই কিলিয়ান এমবাপ্পে ও লেমিন ইয়ামালের। ছবি: এক্স

মঙ্গলবার রাতে মিউনিখে ফরাসিদের ২-১ গোলে হারিয়ে স্প্যানিয়ার্ডরা উঠল ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের চলতি আসরের ফাইনালে। প্রতিযোগিতায় এ নিয়ে টানা ছয় ম্যাচ জিতল স্পেন। রোমাঞ্চকর এই জয়ে এক যুগ পর আবারও টুর্নামেন্টের ফাইনালের পেল তারা। টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালের আগেই বিদায় নিলো ফরাসিরা।

আগামী রোববার বার্লিনের বিখ্যাত অলিম্পিক স্টেডিয়ামে চলতি আসরের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে স্পেনের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড কিংবা নেদারল্যান্ডস। আজ ডর্টমুন্ডে সেমিফাইনালের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে দল দুটি। ইংলিশদের সামনে চতুর্থ দল হিসেবে টানা দ্বিতীয়বার ইউরোর ফাইনালে ওঠার বিরাট সুযোগ।

বায়ার্ন মিউনিখের দুর্গ অ্যালিয়েঞ্জ এরিনায় ম্যাচের তিনটি গোলই হয়েছে প্রথমার্ধে। আরেকটু ছোট করে বললে ২৫ মিনিটের মধ্যে। আট মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পের ক্রস থেকে দারুণ এক হেডে স্পেনের জালে বল জড়ান রান্ডাল কোলো মুয়ানি। উচ্ছ্বাসে ভাসে ফরাসিরা। কিন্তু এই লিড বেশি সময় ধরে রাখতে পারেনি দিদিয়ের দেশামের দল।

২১ মিনিটে স্পেনকে সমতায় ফেরান লেমিন ইয়ামাল। ডি-বক্সের বাইরে থেকে ঘূর্ণি শটে বার্সেলোনা সেনসেশন যে গোলটা করলেন সেটির বিশেষণ হতে পারে এক কথায় অসাধারণ। ফরাসি গোলরক্ষক চেষ্টা করেও বলে গ্লাভস ছোঁয়াতে পারেননি। বল পোস্টে লেগে আশ্রয় নেয় জালে। এই গোলে বিরাট এক কীর্তি গড়লেন ইয়ামাল।

ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে গোল করেছেন ১৬ বছর বয়সী স্প্যানিশ তরুণ তুর্কি। এই গোলের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের শুরু হয় লাল উৎসব। চার মিনিট বাদেই কেঁপে ওঠে ফ্রান্সের জাল। ড্যানি ওলমোর কোনাকুনি শট প্রতিহত করতে চেয়েছিলেন ফরাসি ডিফেন্ডার জুলস কুন্ডে।

কিন্তু বার্সেলোনা তারকার পায়ে লেগে বল জড়িয়ে যায় জালে। প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মঘাতী মনে করা হলেও কয়েক মিনিট পর জানানো হলো গোলটির মালিক ওলমো। টুর্নামেন্টে স্প্যানিশ ফরওয়ার্ডের এটা তৃতীয় গোল। এই গোলের সুবাদে গোল্ডেন বুাটের লড়াইয়ে চলে এলেন ওলমো। আসরে সমান তিনটি গোল আছে আরও চারজনের।

এর মধ্যে নেদারল্যান্ডস ফরওয়ার্ড কোডি গাকপোও আছেন। আজ মাঠে নামবে তার দল। বাকি তিনজনের দল ইতোমধ্যে বিদায় নিয়েছে আসর থেকে। কাজেই সর্বোচ্চ গোলের পুরস্কারের লড়াইয়ে আপাতত এগিয়ে আছেন ওলমো ও গাকপো। ওলমোর ওই গোলটার আর শোধ দিতে পারেনি ফ্রান্স। ব্যবধান বাড়াতে পারেনি স্পেনও।

তবে দুই দলই গোলের জন্য চেষ্টা করেছে। দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য ফরাসিরাই বেশি গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেছে। মাস্ক ছাড়া খেলতে নামা এমবাপ্পে কয়েকটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন। হতাশ করেছেন তার সতীর্থরা। ফ্রান্স অধিনায়ক নিজেও একাধিক গোল মিস করেছেন। অবশ্য এই টুর্নামেন্টে ফরাসিদের আক্রমণ গোল মিসের মহড়াই দিয়েছে।

উন্মুক্ত খেলায় ৪৮০ মিনিট গোল না করেই সেমিফাইনালে উঠেছে ফ্রান্স। সেই হতাশা স্পেনের বিপক্ষে শুরুতেই কাটিয়ে ওঠার আভাস দেন দেশামের শিষ্যরা। কিন্তু সেটা বাস্তবে পরিণত হয়নি। যার মাসুল গুণতে হলো গত চারটি মেজর টুর্নামেন্টের তিনটিতে ফাইনাল খেলা ফ্রান্সকে। ফরাসিদের বিদায় করে সুদিন ফেরানোর ইঙ্গিত দিলো তারুণ্য আর প্রতিভায় ঠাসা স্পেন।