গত কয়েকদিনে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য কিছু খবর

সম্প্রতি দেশজুড়ে চলা কোটা আন্দোলন ও নৈরাজ্যকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি অনেকটাই টালমাটাল হয়ে পড়েছিল। বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট সেবা। অস্বাভাবিক এই পরিস্থিতির কারণে টোয়েন্টিফোরলাইভ নিউজপেপার গত কয়েকদিন কোনো ধরনের সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি। এ জন্য পাঠকের কাছে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। পাঠকের সুবিধার্থে গেল কয়েক দিনে ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংবাদ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

ছবি - সংগৃহীত

১৬ জুলাই: শান্তিপূর্ণ কোটা সংস্কার আন্দোলন হঠাৎই রূপ নেয় সহিংসতায়। দেশব্যাপী সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হন। সরকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ছাত্রদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় প্রশাসন।

১৭-১৮ জুলাই: ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন

১৭ জুলাই ৪জি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়। পারদিন ১৮ জুলাই ব্রডব্যান্ড সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মহাখালীস্থ ডাটা সেন্টারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যন্ডউইথ সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও দুর্বৃত্তদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষের মধ্যেই এ ঘটনা ঘটে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে বেশকিছু হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। পুলিশের সঙ্গে বিজিবি মোতায়েন করার পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে সাধারণ প্রশাসন।

১৯ জুলাই: কারফিউজ জারি, সেনা মোতায়েন

কোটা সংস্কারের আন্দোলনের জের ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন জেলায় ‍শুরু হওয়া তিন দিনের সংঘর্ষে ১০৩ জন নিহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জারি করা হয় কারফিউ। ৫৭ জেলায় মোতায়েন করা হয় ২৭ হাজার সেনা। সাধারণ প্রশাসনের সঙ্গে শুরু হয় সেনা টহল।

২০ জুলাই: আন্দোলনকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত থাকে। নতুন করে আরও কিছু মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪৮-এ।

কোটা সংস্কার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক

সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী বৈঠকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক তদের আট দফা দাবির কথা তুলে ধরেন।

আপিল বিভাগের শুনানির তারিখ পরিবর্তন

পরিস্থিতি বিবেচনায় অ্যাটর্নি জেনারেল আগামী ৮ জুলাইয়ের নির্ধারিত শুনানি এগিয়ে আনার আবেদন করলে রোববার শুনানির তারিখ নির্ধারিত হয়।

বিদেশি কূটনীতিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্রিফিং

দেশে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের ডেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ। তিনি বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে কূটনীতিকদের সরকারের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন শান্তই ছিল, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা অস্থিতিশীল করে তুলেছে। 

বিএনপির প্রতিবাদ

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা মোটেও এ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

সাধারণ ছুটি ঘোষণা

কারফিউ জারির পরপরই নির্বাহী আদেশে রোববার এবং সোমবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে তা মঙ্গলবার পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। তবে সাধারণ ছুটির মধ্যেই আদালত রোববারের শুনানির তারিখ অপরিবর্তিত রাখে।

২১ জুলাই: হাইকোর্টের রায় বাতিল আপিল বিভাগের: নতুন কোটা কাঠামো নির্ধারণ

সকাল ১০টায় আদালত বসে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ৭ সদস্যের বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষ, আন্দোলনকারীদেরসহ আরও কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীদের উপস্থিতিতে হয় শুনানি। প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যপী শুনানি শেষে শেষে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে কোটা সম্পর্কিত নির্দেশনা দেন।

যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ এবং ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে সরকারকে অনতিবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারির কথাও বলেন প্রশাসন।

এদিন আরও কয়েকজনের মৃত্যুর ফলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৭৪-তে পৌঁছায়। দেশব্যাপী অভিযানে ৫৫০ জনকে প্রেপ্তার করা হয়।

২২ জুলাই: আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণে আরও পাঁচজন নিহত। এ নিয়ে মোট নিহতের সংখ্যা দাড়ায় ১৮৭ জনে। এদিন সরকার কোটা ব্যবস্থা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে।

শিক্ষার্থীদের ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেট

কারফিউ জারির মধ্যে শিক্ষার্থীরা তাদের শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করে বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইন্টারনেট সংযোগ সচল করতে হবে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং হল খুলে দিতে হবে।

২২ জুলাই: ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন। এ সময় ব্যবসায়ীদের কথা শুনেন এবং নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী তার দেওয়া বক্তব্যে জামায়াতকে জঙ্গী সংগঠন হিসেবে আখ্যা দেন এবং বিএনপিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মদদদাতা হিসেবে উল্লেখ করেন।

২৩ জুলাই: সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট চালু

২৩ জুলাই রাত থেকে জরুরি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সীমিত পরিসরে চালু করা হয় ব্রন্ডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। আগামী রোববার ও সোমবার মোবাইল ইন্টারনেট চালু করার ইঙ্গিত দেন  ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

এদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়। এ নিয়ে আন্দোলনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯৭ জন।

দেশের বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য মামলা দায়েরের পর প্রায় তিন হাজার বিএনপি, জামায়াতের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

২৪ জুলাই: অফিস আদালাত, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চালু

প্রায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরে দেশ। সকাল ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অফিস-আদালতের কার্যক্রম চলে। বিকেল ৫টা থেকে ফের শুরু হয় কারফিউ। গত কয়েক দিনে পর্যায়ক্রমে দুই ঘণ্টা, তিন ঘণ্টা করে বাড়তে থাকে কারফিউর শিথিলতার সময়। আগামীকালও এই রুটিন অব্যাহত থাকবে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী সপ্তাহে তুলে নেওয়া হবে কারফিউ।