কেলেঙ্কারির ঝড়েও অবিচল ইসলামী ব্যাংকিং: জুনে বেড়েছে আমানত

দেশের ইসলামী ব্যাংকিং খাতে জুন মাসে আমানত বেড়েছে, যদিও বেশ কয়েকটি শরিয়াভিত্তিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ব্যাপক কেলেঙ্কারি ও অনিয়মের মুখোমুখি হচ্ছে। সোমবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুন মাসে ইসলামী ব্যাংকগুলোতে মোট আমানত বেড়েছে ১১,৬২৫ কোটি টাকা বা ২.৭১ শতাংশ। আগের মাসের তুলনায় মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪,৪০,৪২৭ কোটি টাকায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো

এদিকে, ঋণ বিনিয়োগ এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের মতো অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকিং সূচকগুলিতেও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব তথ্য ইঙ্গিত করছে যে গ্রাহকদের আস্থা বেশ অক্ষুণ্ণ রয়েছে।

ব্যাংকাররা এই অর্জনের জন্য খাতটির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির কৃতিত্ব দিয়েছেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিনিয়োগের জন্য ঋণের পরিমাণ পৌঁছেছে ৫,১৩,৭৩৪ কোটি টাকায়, যা আগের মাসের তুলনায় ১.৯১ শতাংশ বৃদ্ধি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ব্যাংকিং শিল্পের মোট বিনিয়োগের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসে ইসলামী ব্যাংকিং বিনিয়োগ থেকে।

জুন মাস পর্যন্ত, তফসিলি ব্যাংকগুলোর মোট বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ২০,৬২,৮৫৩ কোটি টাকায়, যার মধ্যে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর অংশ ১৫,৪৯,১১৯ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, জুন মাসে ইসলামী ব্যাংকিং খাতের সম্পদের পরিমাণও ৫.১৮ শতাংশ বেড়ে ৮,৫৩,৩৯৭ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জানান, তার ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং শাখাগুলো প্রতিটি সূচকে ৫০ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।

‘আমি মনে করি, যেসব ব্যাংকের বিরুদ্ধে কেলেঙ্কারি ও অনিয়মের অভিযোগ নেই, তারাই তীব্র প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা খাতটির সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে,’ বলেন আলী।

তিনি আরও বলেন, কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত ব্যাংকগুলোতে আমানতকারীরা ইতিমধ্যেই আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।

বাংলাদেশে ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক রয়েছে। এছাড়াও, ইসলামী শাখা এবং ইসলামী উইন্ডো সহ প্রচলিত ব্যাংকগুলোও শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে।

গ্রাহক আমানতের ভিত্তিতে দেশের বৃহত্তম শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এবং আরও বেশ কয়েকটি ব্যাংক শেয়ারহোল্ডার মালিক এস আলম গ্রুপের ব্যাপক অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির কারণে তীব্র তারল্য সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ভিত্তিক এই শিল্পগোষ্ঠী এবং এর সহযোগীরা ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত ছয়টি ব্যাংক থেকে ৯৫,৩৩১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার ৭৯ শতাংশই এসেছে ইসলামী ব্যাংক থেকে।

তবে, পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ধর্মীয় ধারণা থেকে অনেকে এখনও শরিয়াভিত্তিক ব্যাংককেই বেশি পছন্দ করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ করে, অবসরপ্রাপ্ত বা বয়স্ক ব্যক্তিরা প্রায়শই ইসলামী ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করেন কারণ তারা সুদ নিতে চান না, যা ইসলামে নিষিদ্ধ।’

এদিকে, শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে রপ্তানি আয় স্থানান্তর জুন মাসে ৪.১৭ শতাংশ কমে ৭,৭৫১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

একই ধারাবাহিকতায়, আমদানি খাতেও ১৭.৫৫ শতাংশ কমে ১১,২৩১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

তবে, ইসলামী ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসী আয় প্রাপ্তিতে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। মে মাসে যেখানে ১০,৬৩৪ কোটি টাকা এসেছিল, জুন মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০,৮৪৫ কোটি টাকায়।

ইসলামী ব্যাংকিংয়ে মোট বকেয়া এজেন্ট ব্যাংকিং আমানত দাঁড়িয়েছে ২১,৩৩৪ কোটি টাকায়, যা মে মাসের তুলনায় ৩.৪৪ শতাংশ বেশি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত আট মাস ধরে ইসলামী ব্যাংকিং খাতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আমানত (বকেয়া) স্পষ্টতই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ থেকে বোঝা যায় যে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে মাসিক এজেন্ট ব্যাংকিং আমানত বাড়ছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে ব্যাংকিং সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে সঞ্চয়ের মানসিকতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ডেইলি স্টার অবলম্বনে