সড়ক-রেল অবরোধ তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের, ট্রেনে ইটপাটকেলে শিশুসহ আহত বেশকিছু যাত্রী

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। অবরোধকালে একটি চলন্ত ট্রেনে শিক্ষার্থীরা উপর্যুপরি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে শিশুসহ বেশকিছু ট্রেনযাত্রী রক্তাক্ত আহত হয়েছেন। এছাড়া সড়কে অবরোধের কারণে মহাখালী থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের দিকে সড়কের দুই পাশেই সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ যানজট ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীর অন্যান্য অংশে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

মহাখালীতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেছেন সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা

আজ সোমবার বেলা ১১টায় আনুমানিক ২ হাজার শিক্ষার্থী তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মিছিল বের করেন। মিছিলটি বেলা সোয়া ১১টায় মহাখালী রেলক্রসিং এলাকায় অবস্থান নেয়। বিকেল ৪টার পর তারা অবরোধ তুলে নিয়ে চলে যান। পড়ে সন্ধ্যার দিকে ফের শিক্ষার্থীরা কলেজ এলাকায় সড়ক অবরোধ করে।

দুপুরে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টার অবরোধ চলাকালে নোয়াখালী থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর ট্রেন উপকূল এক্সপ্রেস মহাখালী লেভেলক্রসিং অতিক্রম করার সময় সেটি থামানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ট্রেনটি না থেমে গতি কমিয়ে চলতে থাকলে সেটি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে ট্রেনের কয়েকটি জানালার কাচ ভেঙে যায়। একপর্যায়ে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন থামিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে তারা। এতে শিশুসহ দুই ট্রেনের ভেতরে থাকা বেশ কয়েকজন যাত্রী গুরুতর আহত হন।

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন

রেলওয়ে পুলিশ জানায়, ঢাকায় আসার পথে উপকূল এক্সপ্রেসে আন্দোলনকারীরা হামলা চালিয়ে জানালার কাচ ভেঙে ফেলেছেন। পরে ট্রেনটি পুলিশ পাহারায় সেখান থেকে ঢাকা স্টেশনে আনা হয়েছে। উপকূল এক্সপ্রেসে হামলার ঘটনায় কয়েকজন আহত আছেন।

যানজটে ভোগান্তি : শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে মহাখালী থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দিকের সড়কে দুই পাশেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে কেউ কেউ হেঁটে গন্তব্যে রওনা হন। তাদের কারো কারো হাতে মালপত্রের ভারী বস্তা, ব্যাগ দেখা গেছে। কেউ কেউ আবার সঙ্গে থাকা বয়স্ক স্বজনদের ধরে ধরে কিংবা শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে হেঁটে যান।

অবরোধের কারণে সৃষ্ট ভোগান্তি নিয়ে অনেক সাধারণ মানুষকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। তাদের ভাষ্য, দাবি যৌক্তিক হলে সরকারের কাছে গিয়ে তা পেশ করুক শিক্ষার্থীরা। রাস্তাঘাট বন্ধ করে, মানুষকে জিম্মি করে, পেরেশানি দিয়ে কেন আন্দোলন করা হচ্ছে?

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে মহাখালী এলাকায় লাইনে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন আটকা পড়ে। সেগুলো হলোÑ জামালপুরের তারাকান্দিগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকামুখী বনলতা এক্সপ্রেস।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে দুপুর পৌনে ১২টার পর থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কোনো ট্রেন ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে গন্তব্যে যেতে পারেনি। আবার বিমানবন্দর অংশ থেকেও কোনো ট্রেন কমলাপুরে যেতে পারেনি।

বনানীর থানার ওসি মো. রাসেল বলেন, মহাখালী লেভেলক্রসিংয়ের বর্তমান অবস্থা ভয়াবহ। ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা লেভেলক্রসিংয়ের ওপর দাঁড়িয়ে আন্দোলন করছেন। তারা ট্রেন থামিয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন। এছাড়া তাদের আন্দোলনের কারণে মহাখালী, বনানী ও জাহাঙ্গীর গেট এলাকায় যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত অনেকে জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোনো প্রতিনিধি না আসা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অবরোধ না তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। তাদের দাবি, মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের মহাখালীতেই আসতে হবে।

পরে আন্দোলনকারীদের ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে আলোচনার জন্য গেলে তারা বিকেল ৪টার দিকে সড়ক ছেড়ে দেন। আলোচনা শেষে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা সচিবালয়ের সামনে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন। অন্যদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কলেজের অন্য শিক্ষার্থীরা ফের মহাখালীতে সড়ক অবরোধ করেন।

সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করার দাবিতে এবং তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠনের দাবিতে কয়েক মাসে একাধিকবার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭ কলেজের শিক্ষার্থী বিক্ষোভ শুরু করলে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেন।