রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সামান্য বেড়েছে

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সামান্য বেড়ে ১৮.৪৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্দেশিকা অনুযায়ী এই হিসাব করা হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় রিজার্ভের এই সামান্য উন্নতি হয়েছে।

মার্কিন ডলার

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ নভেম্বর ১৮.৪৩ বিলিয়ন ডলার থাকা রিজার্ভ বৃহস্পতিবার বেড়ে ১৮.৪৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

৮ নভেম্বর রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের উপরে ছিল। পরের দিন এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে (আকু) সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের আমদানি বিল পরিশোধে ১.৫ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার পর রিজার্ভ কমে বর্তমান পর্যায়ে নেমে আসে। আকুকে প্রতি দুই মাস অন্তর এই অর্থ পরিশোধ করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচলিত হিসাব অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ২৪.১৬ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন হলো একটি আঞ্চলিক পেমেন্ট সেটেলমেন্ট ব্যবস্থা। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মধ্যকার লেনদেন আকুর মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়।

সরকারি লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ব্যাংকগুলোকে সরাসরি রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করেছে। এর পরিবর্তে আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজার থেকে ডলার সংগ্রহ করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ৮.৯৩ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এসেছিল ৬.৮৭ বিলিয়ন ডলার।

বৈদেশিক মুদ্রার আরেকটি প্রধান উৎস রপ্তানি আয়ও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেড়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ২০.৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪.১৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা ২০২৩ সালের একই মাসে ছিল ৩.৪২ বিলিয়ন ডলার। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রপ্তানি আয় ১০.৮০ শতাংশ বেড়ে ১৫.৭৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৪.২৫ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এর নির্দেশিকা অনুসরণ করে মোট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ এবং নীট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ হিসাব করে।

ডলার সংকট এবং আমদানি বিল পরিশোধের চাপের কারণে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে ১২০ টাকায় পৌঁছেছে। ২০২১ সালের জুনে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৪.৮১ টাকা, ২০২২ সালের জুনে ৯৩.৪৫ টাকা এবং ২০২৩ সালের জুনে ১০৬ টাকা।

চলমান ডলার সংকট ব্যাংকগুলোর আমদানি বিল পরিশোধ এবং ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে, যা ব্যবসায়ীদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।

গত তিন অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে, যা রিজার্ভ হ্রাসের প্রধান কারণ। ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার।