গাজায় স্বর্ণের চেয়েও মূল্যবান গাধা!

বছরব্যাপী যুদ্ধ, অবরোধ ও জ্বালানি সংকটে বিপর্যস্ত গাজায় পরিবহনের একমাত্র ভরসা এখন গাধা। ইসরায়েলি হামলায় আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা প্রায় অচল হয়ে পড়ায় গাজাবাসীর জীবনে গাধার গুরুত্ব এখন স্বর্ণের চেয়েও বেশি। জীবন বাঁচাতে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনে এই পশুটিই এখন তাদের একমাত্র ভরসা।

গাধা এখন স্বর্ণের চেয়ে দামী

এএফপির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় গাধার দাম বা গাধার গাড়িতে পরিবহনের খরচ কমেনি। বরং জ্বালানি সংকট, ইসরায়েলি হামলা এবং ভাঙাচোরা রাস্তার কারণে আধুনিক যানবাহন চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ায় গাধাই হয়ে উঠেছে একমাত্র ভরসা।

মধ্য গাজার দেইর আল বালাহ শহরের আমিনা আবু মাঘাসিবের জীবিকার মূল অবলম্বন এখন তার গাধা ও গাড়ি। যুদ্ধের আগে দুধ-দইয়ের ব্যবসা করলেও এখন এই গাধার গাড়িই তার একমাত্র আয়ের উৎস। তার আগের গাধাটি বোমা হামলায় মারা যাওয়ায় ৮০ হাজার টাকা খরচ করে নতুন গাধা কিনেছেন তিনি। গাধার খাবারের ব্যবস্থা করা চ্যালেঞ্জিং হলেও পরিবারের জন্য এই গাধার গাড়িই এখন তার জীবিকার একমাত্র অবলম্বন।

ইসরায়েলি সতর্কবার্তার কারণে গাজার মানুষকে ঘন ঘন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়। এমতাবস্থায় গাধার গাড়িই হয়ে ওঠে তাদের একমাত্র ভরসা। ৩২ বছর বয়সী মিসবাহ, একসময় সবজি বিক্রি করলেও এখন গাধার গাড়িতে পণ্য পরিবহন করেন। তার মতে, গাধার খাদ্য বার্লির দাম বেড়ে যাওয়ায় গাধা পালন বেশ ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।

তিন সন্তানের জননী মারওয়া ইয়েস জানান, গাধার গাড়িতে চলাচল ব্যয়বহুল হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি অপরিহার্য। ‘একসময় গাধার গাড়িতে চড়তে লজ্জা লাগত, এখন আর কোনো বিকল্প নেই,’ বলেন তিনি।

জাবালিয়া থেকে পালিয়ে আসা ৬২ বছর বয়সী হোসনি আবু ওয়ার্দার কাছে গাধা এখন স্বর্ণের চেয়েও মূল্যবান। ‘আধুনিক গাড়ি অকেজো হলেও গাধা এখন আমাদের বিকল্পহীন এক পরিবহন,’ বলেন তিনি। একবার তিনি জাবালিয়া থেকে পালানোর সময় ১৪ ঘণ্টা গাধার গাড়ির জন্য অপেক্ষা করেছিলেন।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধের কারণে গাজার ৪৩ শতাংশ কর্মক্ষম প্রাণী মারা গেছে। বর্তমানে গাজায় মাত্র দুই হাজার ৬২৭টি কর্মক্ষম প্রাণী বেঁচে আছে।