গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৪৭ জন নিহত, বাস্তুচ্যুতদের তাঁবু শিবিরেও আঘাত

গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসে বুধবার ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক অগ্রসর হয়েছে এবং একইসঙ্গে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা জুড়ে অন্তত ৪৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি মেডিকেল কর্মকর্তারা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গাজার খান ইউনিসে ইসরাইলি আক্রমণে যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের আত্মীয়স্বজন নাসের হাসপাতালের মর্গ থেকে মরদেহগুলো বুঝে পেয়ে শোকে ভেঙে পড়েন। ছবি: আবেদ রহিম খতিব - আনাদোলু এজেন্সি

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নতুন করে স্থানান্তরের নির্দেশ জারি করার পর ট্যাঙ্কগুলো এগিয়ে যায়। সেনাবাহিনীর দাবি, এলাকাটি থেকে ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা রকেট হামলা চালিয়েছে।

গোলাবর্ষণের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পরিবারগুলো ঘরবাড়ি ছেড়ে পশ্চিম দিকে আল-মাওয়াসির মানবিক সাহায্য এলাকার দিকে পালিয়েছে। ফিলিস্তিনি ও জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের মতে, গাজায় এখন আর কোনও নিরাপদ স্থান নেই এবং ২৩ লাখ বাসিন্দার বেশিরভাগই বারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

বুধবার আল-মাওয়াসির একটি তাঁবু-শিবিরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১৭ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। বেসামরিক জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলায় বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর বেশ কয়েকটি তাঁবুতে আগুন লেগে যায়।

গাজা সিটিতে তিনটি বাড়িতে আরেকটি বিমান হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন। উদ্ধার অভিযান চলছে।

মধ্য গাজায় তিনটি পৃথক বিমান হামলায় ১১ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ছয় শিশু এবং একজন মেডিকেল কর্মী রয়েছেন। নিহতদের মধ্যে পাঁচজন একটি বেকারির বাইরে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

রাফাহে ইসরায়েলি ট্যাঙ্কের গুলিতে আরও নয়জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ার একটি হাসপাতালে ইসরায়েলি সেনারা টানা পঞ্চম দিনের মতো গুলি চালিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে তিনজন মেডিকেল কর্মী আহত হয়েছেন। হাসপাতালের পরিচালক জানিয়েছেন, ড্রোন থেকে স্ক্র্যাপনেল ভর্তি বোমা ফেলা হচ্ছে।

জাবালিয়া, বেইত লাহিয়া এবং বেইত হানুনে ইসরায়েলি সেনারা ডজনখানেক বাড়ি উড়িয়ে দিয়েছে। ফিলিস্তিনিরা বলছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করে এবং বোমা বর্ষণ করে একটি বাফার জোন তৈরি করার চেষ্টা করছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা হামাস যোদ্ধাদের পুনরায় সংগঠিত হওয়া রোধ করার জন্য ফিরে এসেছে।

উল্লেখ্য, ইসরায়েলি সূত্র প্রথমে দাবি করেছিল গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা ১২০০ ইসরায়েলি নিহত এবং ২৫০ জনের বেশি জিম্মি হয়েছে। তবে, ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ পরবর্তীতে প্রকাশ করে যে, ইসরায়েলি বাহিনীর হেলিকপ্টার এবং ট্যাঙ্ক আক্রমণেই নিহত হয়েছে দাবি করা ১১৩৯ জনের অনেকে।

ইসরায়েলি আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৪৪,৪০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অসংখ্য আহত এবং গাজার অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাজার বেশিরভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েল লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়। ফলে লেবাননে সংঘাত থেমেছে। কিন্তু গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। উল্লেখ্য, এক বছরেরও বেশি সময় আগে গাজায় মাত্র এক সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

সূত্র: মিডলইস্ট মনিটর