বাংলাদেশ-ভারত অচলাবস্থা: সমাধানের পথ দেখছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরাজমান অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, পারস্পরিক যোগাযোগ ও আলোচনার মাধ্যমেই যেকোনো অচলাবস্থা দূর করা সম্ভব। তিনি আরও জানান, সোমবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বাংলাদেশ সফরে আসছেন।

মো. তৌহিদ হোসেন

আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে সার্ক জার্নালিস্ট ফোরাম আয়োজিত এক সেমিনারে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র দপ্তর পরামর্শ (এফওসি) একটি নিয়মিত ব্যবস্থা। পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে এ ধরনের বৈঠক অস্বাভাবিক কিছু নয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পররাষ্ট্র সচিবরা ফলপ্রসূ আলোচনা করবেন।

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তিত বাস্তবতা মেনে নিয়ে দুই পক্ষকেই সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে সাম্প্রতিক মন্দার প্রভাব বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের ওপরও পড়েছে, বিশেষ করে কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীদের ওপর।

উপদেষ্টা জানান, সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আন্তরিক। প্রাথমিকভাবে সার্কের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের স্থায়ী কমিটির বৈঠক দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।

সেমিনারে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু, কৌশল বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান নাসির এবং দ্য নিউ নেশনের সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদারও বক্তব্য রাখেন।

৫ আগস্ট-পরবর্তী ঘটনা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ও সমালোচনার মধ্যেই ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সোমবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন। পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনার পাশাপাশি তিনি আরও কয়েকটি বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন।

নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটিই কোনো ভারতীয় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার প্রথম বাংলাদেশ সফর।

পররাষ্ট্র সচিব মিশ্রি এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র দপ্তর পরামর্শের (এফওসি) নেতৃত্ব দেবেন।

‘পররাষ্ট্র সচিব ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সফর করার কথা রয়েছে। তিনি তার সমকক্ষের সঙ্গে দেখা করবেন এবং সফরকালে আরও বেশ কিছু বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে,’ শুক্রবার নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল এ কথা জানান।

‘পররাষ্ট্র সচিবদের নেতৃত্বে এফওসি বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে একটি কাঠামোগত ব্যবস্থা। আমরা এই বৈঠকের জন্য অপেক্ষা করছি,’ বলেন বিদেশ মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সকল বিষয় আলোচনার আওতায় রাখার চেষ্টা সবসময়ই থাকে। আলোচনা চলছে।

তিনি বলেন, বাণিজ্য, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ এবং পানি সম্পদ - এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে, ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় আশা ব্যক্ত করে যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আইনি অধিকার সমুন্নত রাখা হবে এবং বিচার নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভাবে পরিচালিত হবে।

গত বুধবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়, কিন্তু তা পারস্পরিক হতে হবে।

‘এটা খুবই স্পষ্ট যে আমরা ভালো সম্পর্ক চাই, কিন্তু তা পারস্পরিক হতে হবে। আমাদের সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে,’ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

এই এফওসি-তে বর্তমানে ভারতে থাকা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্ভাব্য প্রত্যর্পণ এবং ভিসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সমস্ত বিষয় পর্যালোচনার জন্য এই প্রাতিষ্ঠানিক সংলাপ ব্যবস্থার আওতায় শেষ এফওসি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৪ নভেম্বর ২০২৩ সালে নয়াদিল্লিতে।