পুঁজিবাজারে ইতিবাচক ধারা, আইসিবির বিনিয়োগে আস্থা ফিরছে!

গত সপ্তাহে (বৃহস্পতিবারের লেনদেন পর্যন্ত) পুঁজিবাজারে ইতিবাচক ধারা ফিরে এসেছে। কম দামে শেয়ার কিনতে আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের ক্রয় চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে উর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে

পূর্ববর্তী সপ্তাহের ধারাবাহিক মন্দার পর, বিনিয়োগ করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) ৩ হাজার কোটি টাকার সরকারি জামানতযুক্ত ঋণ পাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। এই ঋণ বাজারের পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, আইসিবি ঋণ পাওয়ার পর বাজারে অর্থ সরবরাহ শুরু করায় এই ঊর্ধ্বমুখী ধারা দেখা দিয়েছে। তবে, এই উত্থান স্থিতিশীল হবে কিনা, তা নিয়ে বিনিয়োগকারীরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। বাজারের অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠার মতো কোনো বড় ধরনের ইতিবাচক সংবাদ এখনও আসেনি বলে তারা মনে করছেন।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে ১৭২টি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে, ১৬৮টির কমেছে এবং ৫৭টির অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বৃদ্ধি ও হ্রাস পাওয়া কোম্পানির সংখ্যা প্রায় সমান হলেও, বৃহৎ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে বাজার মূলধন বেড়েছে।

ডিএসই-এর ব্রড ইনডেক্স (ডিএসইএক্স) ১১৬.১ পয়েন্ট বা ২.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৫,২২১.৫৭ পয়েন্টে উঠে এসেছে। বিনিয়োগকারীদের লেনদেন পূর্ববর্তী সপ্তাহের ৩২২.২ কোটি টাকার তুলনায় ১৫.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৭৩.১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

৩০টি বৃহৎ কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত ডিএস৩০ সূচক ৫৬ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে ১,৯৩৮.২৯ পয়েন্ট এবং শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানিগুলোর ডিএসইএস সূচক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে ১,১৬৭.৩৫ পয়েন্টে পৌঁছেছে।

বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন ওষুধ খাতে (২৪.৫ শতাংশ), এরপর বস্ত্র খাতে (১১.৬ শতাংশ) এবং ব্যাংক খাতে (৯.৩ শতাংশ)। আর্থিক প্রতিষ্ঠান (-১.০ শতাংশ) এবং মিউচুয়াল ফান্ড (০.৪ শতাংশ) ব্যতীত সব খাতই লাভ করেছে। টেলিকম খাত ৪.৭ শতাংশ লাভ করে শীর্ষে রয়েছে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ও ইতিবাচক প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মন্দাবস্থায় থাকা বাজারকে সহায়তা করার জন্য সরকারের জামানতে ১৮ মাস মেয়াদে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়েছে।

আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন জানান, তারা ইতোমধ্যে ভালো শেয়ারে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। ফলস্বরূপ, সপ্তাহের চার কার্যদিবসের মধ্যে তিনটিতেই ক্রয় চাপ বেশি ছিল। বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার বাজার বন্ধ ছিল।

সিএসই-এর সার্বিক সূচক (সিএএসপিআই) ২১৮ পয়েন্ট বেড়ে ১৪,৫২২ পয়েন্ট এবং নির্বাচিত সূচক (সিএসসিএক্স) ১৪১ পয়েন্ট বেড়ে ৮,৮৪৩ পয়েন্টে স্থির হয়েছে। চট্টগ্রামের বিনিয়োগকারীরা গত সপ্তাহে ১.৪১ কোটি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিট লেনদেন করেছেন, যার লেনদেন মূল্য ৪৫.৯ কোটি টাকা।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ, বাংলাদেশ (পিইবি)-এর চেয়ারম্যান ও সিইও ড. মো. মাশরুর রিয়াজ বলেন, দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির উন্নতির কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসছে। আইসিবির ৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের উদ্যোগ বাজারের স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।