বাংলাদেশ যুব কর্মসংস্থান ও বৈশ্বিক শ্রম সহযোগিতা জোরদার করবে

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল যুব কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

ছবি - সংগৃহীত

রিয়াদে অনুষ্ঠিত বৈশ্বিক শ্রম বাজার সম্মেলনে তিনি বলেন, `আমাদের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের যুবকরা যেন শুধু চাকরিপ্রার্থী না হয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে মূল্যবান অবদানকারীতে পরিণত হয়।'

মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ড. নজরুল বাংলাদেশের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন, যার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা এবং উৎপাদনসহ গুরুত্বপূর্ণ খাতে দুই লক্ষেরও বেশি যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৭০% স্নাতক ছয় মাসের মধ্যে চাকরি পেয়েছেন, যা শিল্প-ভিত্তিক প্রশিক্ষণ এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের কার্যকারিতা প্রমাণ করে।

তিনি ডিজিটাল চাকরি-মিলন প্ল্যাটফর্ম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত কর্মসংস্থান সমাধান এবং অনলাইন ফ্রিল্যান্সারদের দ্বিতীয় বৃহত্তম সরবরাহকারী হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থানের ওপর জোর দেন, যার মাধ্যমে বার্ষিক ৫০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় হয়।

টেকসই কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষা ও শিল্পের মধ্যে ব্যবধান দূর করা এবং প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করার বিষয়ে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে ড. নজরুল আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা আরও জোরদার করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

১০০ টিরও বেশি দেশের নীতিনির্ধারক, শিল্পনেতা, পণ্ডিত, উদ্ভাবক এবং শ্রম খাতের বিশেষজ্ঞরা বুধবার সৌদি আরবে দ্বিতীয় বৈশ্বিক শ্রম বাজার সম্মেলনে (জিএলএমসি) মিলিত হন।

এই সম্মেলনটি বৈশ্বিক শ্রম বাজারের মূল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে।

সৌদি আরবের মানব সম্পদ মন্ত্রী আহমেদ বিন সুলাইমান আলরাজি উদ্বোধনী বক্তব্যে সম্মেলনের ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘এক বছর আগে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জিএলএমসি শ্রম খাতের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার একটি শীর্ষস্থানীয় প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই বছরের আলোচনা বৈশ্বিক বাজারের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, শ্রমের গতিশীলতা এবং উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে অর্থবহ আলোচনা করার সুযোগ সৃষ্টি করে।’

সম্মেলনের ফাঁকে, আসিফ নজরুল কাতারের শ্রমমন্ত্রী ড. আলী বিন সাইদ বিন সামিখ আল মাররির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।

তিনি বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রতি কাতারের অব্যাহত সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি ২০২২ ফিফা বিশ্বকাপ সহ বড় অবকাঠামো প্রকল্পে তাদের অবদানের কথা স্বীকার করেন এবং কাতারের শ্রম সংস্কারকে স্বাগত জানান।

উপদেষ্টা কাতারের মন্ত্রীর কাছে প্রাকৃতিক মৃত্যুজনিত বীমা এবং আইনি বিরোধে আর্থিক সহায়তা, কাতারের ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নে স্বাস্থ্যসেবা, প্রযুক্তি এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি খাতে দক্ষ পেশাদার নিয়োগ বৃদ্ধি, অভিবাসন ব্যয় হ্রাস এবং স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান।

তিনি বাংলাদেশে দক্ষতা-নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং শ্রম বাস্তুতন্ত্র আধুনিকীকরণের জন্য কাতারকে আমন্ত্রণ জানান।

ড. নজরুল ১৯৮৮ সালের দ্বিপাক্ষিক শ্রম চুক্তির আওতায় সহযোগিতা জোরদার করতে ২০২৫ সালের শুরুতে দোহায় ৭ম যৌথ কমিটির বৈঠক আয়োজনের প্রস্তাব দেন।

কাতারের শ্রমমন্ত্রী বাংলাদেশি শ্রমিকদের অবদানের প্রশংসা করেন এবং প্রস্তাবগুলো ইতিবাচকভাবে পর্যালোচনা করার আশ্বাস দেন।