ফিলিস্তিন-রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্বনেতাদের প্রতি ড. ইউনূসের জোরালো আহ্বান

কাতারের রাজধানী দোহায় অনুষ্ঠিত আর্থনা সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বজুড়ে চলমান মানবিক সংকটগুলোর প্রতি বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বিশেষ করে ফিলিস্তিন ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্দশার কথা উল্লেখ করে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই সংকটগুলো ভুলে যাওয়া চলবে না।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস

মঙ্গলবার সম্মেলনের মূল বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ফিলিস্তিন থেকে শুরু করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী পর্যন্ত বিস্তৃত মানবিক সংকটগুলোকে বিশ্ব উপেক্ষা করতে পারে না।’ তিনি মনে করিয়ে দেন যে, দায়বদ্ধতাহীন সংস্কৃতি ও মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে টেকসই উন্নয়নের পথে বড় বাধা। ফিলিস্তিনের চলমান পরিস্থিতিকে শুধুমাত্র একটি আঞ্চলিক সমস্যা হিসেবে না দেখে সমগ্র মানবজাতির উদ্বেগের বিষয় হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানান তিনি।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, এই দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা বর্তমানে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ বছরের পর বছর ধরে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে, যা দেশের সমাজ, অর্থনীতি ও পরিবেশের ওপর বিপুল চাপ সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘের মহাসচিবের সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকে সংহতির প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করলেও, তিনি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতাদের সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বর্তমান সময়কে একটি 'অনিশ্চিত সময়' হিসেবে আখ্যায়িত করেন, যেখানে বহুপাক্ষিক সহযোগিতা হুমকির মুখে, জলবায়ু পরিবর্তন তীব্রতর হচ্ছে, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে এবং মানবিক সংকট গভীরতর হচ্ছে। তিনি বলেন, নতুন ধারণা, প্রযুক্তি এবং শাসনব্যবস্থার দ্রুত পরিবর্তনে পুরোনো অনেক ধ্যানধারণা অচল হয়ে পড়ছে, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

যুদ্ধ ও সংঘাতকে অধিকার হরণকারী এবং অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, যেকোনো অর্থবহ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তি ও স্থিতিশীলতা অপরিহার্য পূর্বশর্ত। জলবায়ু পরিবর্তনকে মানব অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি প্রকৃতির বিরুদ্ধে এবং সীমাহীন ভোগের মানসিকতাসম্পন্ন জীবনধারা পরিত্যাগের আহ্বান জানান।

একটি টেকসই ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের পথে তিনি ‘তিন শূন্য’র ধারণা উপস্থাপন করেন: সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ, উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে শূন্য বেকারত্ব এবং পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রা ও প্রযুক্তির মাধ্যমে শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ। অধ্যাপক ইউনূস আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই পথে হেঁটে এমন এক নতুন সভ্যতা গড়ে তোলা সম্ভব, যা সকলের জন্য, সর্বত্র টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।