সাংবাদিকতায় সুরক্ষা ও দায়িত্বশীলতা আইনের ওপর জোর তথ্য উপদেষ্টার

সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সভায় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম সাংবাদিকদের জন্য সুরক্ষা আইনের পাশাপাশি সাংবাদিকতার দায়িত্ব ও নৈতিকতা বিষয়ক আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করেন যে, কোনো সাংবাদিক দায়িত্বশীল ও পেশাদার না হলে তিনি আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রাখেন না।

মো. মাহফুজ আলম

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) ‘ফ্যাসিবাদের ১৫ বছরে গণমাধ্যমের বাস্তবতা’ শীর্ষক এই সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে উপদেষ্টা বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে গণমাধ্যমের পরিস্থিতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, পূর্ববর্তী সরকারের সময় বহু সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং অনেক সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার মতে, সাংবাদিকদের একটি অংশ তৎকালীন ‘আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার তথা শেখ পরিবারকে’ রক্ষা করার জন্য কাজ করেছিল।

মাহফুজ আলম বর্তমান সরকারের অধীনে সাংবাদিকদের বেতন, সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং ওয়েজবোর্ড গঠনের বিষয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, বিগত দিনের ‘ফ্যাসিবাদী’ শাসনের প্রভাবে অনেক সাংবাদিকের মধ্যে এক ধরনের ‘সেলফ-সেন্সরশিপ’ গড়ে উঠেছে, যা দূর করা প্রয়োজন। তিনি সাংবাদিকদের সতর্ক করে বলেন, অসত্য সংবাদ প্রকাশের ফলে ব্যক্তির জীবন যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি সমাজে বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি হতে পারে, তাই সংবাদ পরিবেশনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন জরুরি।

উপদেষ্টা আরও জানান, গণমাধ্যমে বিদ্যমান সংকট নিরসনে বর্তমান সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া গণমাধ্যমের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি গণমাধ্যমে একটি সুস্থ ও ইতিবাচক পরিবেশ তৈরিতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এবং দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন।

সভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ আল মামুন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বিগত সরকারের সময়ে গণমাধ্যমের অপেশাদার আচরণের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি 'শিকারি সাংবাদিকতা'র তীব্র সমালোচনা করে বলেন, এর মাধ্যমে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিরোধীদের অপরাধী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা হতো। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, সাংবাদিকদের একটি প্ল্যাটফর্ম তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করার আশ্বাস দিয়েছিল।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয় ‘শিকারি সাংবাদিকতা’ নিয়ে যে গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে, তা একটি শ্বেতপত্রের ভূমিকা পালন করবে এবং আত্মসমালোচনার সুযোগ সৃষ্টি করবে। তিনি বিগত ১৫ বছরে সাংবাদিকদের ওপর চালানো নির্যাতন ও নিপীড়নের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি সংকলন প্রকাশেরও প্রস্তাব দেন।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য সম্পাদক ও সাংবাদিকরাও একমত পোষণ করেন যে, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সুযোগ-সুবিধা লাভের আশায় সাংবাদিকদের একটি অংশ সরকারের পক্ষে সংবাদ পরিবেশন করেছে এবং সরকারের সমালোচনাকারীদের চরিত্র হননে লিপ্ত ছিল। তাঁরা আরও বলেন, দমন-পীড়ন ও চাকরি হারানোর ভয়ে অনেক সাংবাদিক স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারেননি এবং বহু সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

সভায় সিনিয়র সাংবাদিক কামাল আহমেদ, ফারুক ওয়াসিফ, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, আবু সাঈদ খান, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, লাজ্জাত এনাব মহসি-সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন এবং আলোচনায় অংশ নেন।