পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ: বিপুল ক্ষতির আশঙ্কায় এয়ার ইন্ডিয়া

জম্মু ও কাশ্মিরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে, যা সম্ভাব্য যুদ্ধের দিকে মোড় নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর জেরে দুই দেশই পরস্পরের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

এয়ার ইন্ডিয়া

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি রয়টার্সের হাতে আসা একটি চিঠির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, এই বিপুল লোকসান এড়াতে এয়ার ইন্ডিয়া ভারত সরকারের কাছে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে।

গত সপ্তাহে কাশ্মিরে পর্যটকদের ওপর চালানো এক হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। এরই জের ধরে পাকিস্তান প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দেয়। ফলে, ভারতের বিমান সংস্থাগুলোকে, বিশেষ করে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকাগামী ফ্লাইটগুলোকে দীর্ঘ পথ ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। এতে ফ্লাইট পরিচালনার খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এয়ার ইন্ডিয়া গত ২৭ এপ্রিল ভারত সরকারকে চিঠি দিয়ে এই ক্ষতিপূরণের আবেদন করে। চিঠিতে সংস্থাটি উল্লেখ করেছে, পাকিস্তান যদি তাদের আকাশসীমা বন্ধ রাখে, তবে ফ্লাইট পরিচালনায় বছরে ৫০ বিলিয়ন ভারতীয় রুপিরও বেশি অতিরিক্ত খরচ হবে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হলে এই ভর্তুকি প্রত্যাহার করা যেতে পারে বলেও চিঠিতে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

একটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসি জানায়, আকাশসীমায় এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বিমান সংস্থাগুলোর সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ কেমন হতে পারে, তা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল। এর জবাবেই এয়ার ইন্ডিয়া তাদের বিস্তারিত অবস্থা জানিয়ে চিঠি পাঠায়।

এয়ার ইন্ডিয়া মূলত ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মতো দূরপাল্লার রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে, যা তাদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইন্ডিগোর পরিচালিত ফ্লাইটের চেয়ে বেশি দূরত্বের। ফলে পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধের প্রভাব এয়ার ইন্ডিয়ার ওপর তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি পড়েছে। উল্লেখ্য, এয়ার ইন্ডিয়া আগে থেকেই লোকসানে থাকা একটি সংস্থা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সংস্থাটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ৫২০ মিলিয়ন ডলার।

পরিস্থিতি বিবেচনায় এপ্রিল মাসে ইন্ডিগো, এয়ার ইন্ডিয়া এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের নির্ধারিত প্রায় ১২শ ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এই অবস্থায় বিমান সংস্থাগুলোর ক্ষতি কমাতে ভারত সরকার বিকল্প পথের সন্ধান করছে।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা চীনের আকাশসীমা ব্যবহার করে ফ্লাইট পরিচালনা করা যায় কিনা, সে বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ফ্লাইটের জন্য অতিরিক্ত পাইলট নিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথাও সরকারকে জানিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া।