ভারতীয় সংবাদমাধ্যম: চারদিনের যুদ্ধেই নিঃশেষ হতে পারে পাকিস্তানের অস্ত্রভাণ্ডার!

ভারতকে দাঁতভাঙা জবাবের হুঁশিয়ারি দিলেও বাস্তবে অস্ত্র ও গোলাবারুদের ভয়াবহ সংকটে ভুগছে পাকিস্তান। পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ শুরু হলে ইসলামাবাদের সেনাবাহিনী চারদিনের বেশি লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে না। ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষণ ও গোয়েন্দা সূত্রের বরাতে এমনটাই দাবি করেছে ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।

যুদ্ধ লাগলে চারদিনের মধ্যেই গোলা-বারুদ সংকটে পড়ে যাবে পাকিস্তান!

সংবাদ সংস্থা এএনআই এক গোপন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, পাকিস্তানের গোলন্দাজ বাহিনীর কাছে এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত কামানের গোলা নেই। বিশেষ করে এম১০৯ হাউইৎজার কামানের ১৫৫ মিমি শেল এবং বিএম-২১ গ্রাড মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেমের ১২২ মিমি রকেটের মজুদ প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। যুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানি সেনারা ৯৬ ঘণ্টার বেশি পূর্ণশক্তিতে লড়াই চালাতে পারবে না বলে দাবি করা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং হামাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সামরিক সহযোগিতার কারণে পাকিস্তানের অস্ত্রভাণ্ডারে এই শূন্যতা তৈরি হয়েছে। গত কয়েক বছরে কিয়েভ এবং গাজায় ইসলামাবাদ বিপুল পরিমাণে অস্ত্র সরবরাহ করেছে, যার খেসারত এখন পাকিস্তানকে দিতে হচ্ছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, পাকিস্তানের নিজস্ব অস্ত্র কারখানাগুলো বর্তমানে উৎপাদন সংকটের মুখে পড়েছে। একইসঙ্গে, চীন, তুরস্ক এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সরঞ্জাম আমদানিও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তান কিছু ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালালেও, সামগ্রিকভাবে তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদের জোগানে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

ভারতীয় গোয়েন্দা রিপোর্টের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, পাহেলগাম হামলার পর গত ২ মে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত কোর কমান্ডারদের বৈঠকে এই সংকটজনক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে শাহবাজ শরিফের সরকার এখনো সরকারিভাবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

অন্যদিকে, এই উত্তেজনার আবহে চীন ও তুরস্ক গোপনে পাকিস্তানকে সমর্থন ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বলে খবর। প্রতিরক্ষা বিষয়ক জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম ক্ল্যাশরিপোর্টের প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে ‘দ্য ইউরেশিয়ান টাইমস’ জানিয়েছে, চীনের ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’ ইসলামাবাদকে ক্ষেপণাস্ত্রের ভাণ্ডার সরবরাহ করেছে। পরমাণু শক্তিধর এই দুই প্রতিবেশী দেশ সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে চীন পাকিস্তানকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বলেও জানা গেছে।

একইসঙ্গে, ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি, সম্প্রতি করাচির বিমানঘাঁটিতে তুরস্কের একাধিক মালবাহী বিমান অবতরণ করেছে, যেগুলোতে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ছিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এছাড়া, করাচি বন্দরে তুরস্কের একটি যুদ্ধজাহাজ ‘টিসিজি বুয়ুকাদা’ পাকিস্তানের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে চীন ও তুরস্কের এই ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা ভারতের জন্য নিঃসন্দেহে উদ্বেগের কারণ।

তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর বালাকোটে ভারতের বিমান হামলার প্রসঙ্গ টেনে এনেছে। তাদের দাবি, সেই সময় পাকিস্তান পাল্টা হামলা চালালেও ভারতের বিমানবাহিনীর প্রতিরোধে তা ব্যর্থ হয় এবং তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে পাকিস্তান দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয়। আবারও সেই একই বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে ইসলামাবাদ।

ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তান যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখালেও আদতে তাদের সেনাবাহিনী অস্ত্র ও গোলাবারুদের অভাবে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই। ফলে, পরমাণু যুদ্ধের হুমকি দিয়ে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা ছাড়া তাদের হাতে বিশেষ কিছু করার নেই।