ইসরায়েলি বেড়ায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের সিনজিল: জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত, যেন ‘খোলা কারাগার’

ইসরায়েলের নির্মিত একটি নতুন তারের বেড়া ফিলিস্তিনের সিনজিল শহরকে ধীরে ধীরে একটি ‘খোলা কারাগারে’ পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রামাল্লাহর উত্তরে অবস্থিত এই শহরের বাইরে দেড় হাজার মিটার দীর্ঘ ও ছয় মিটার উঁচু এই বেড়াটি নির্মাণ করা হয়েছে, যা ছয় হাজার শহরবাসীর জীবনকে কার্যত বন্দিদশায় ঠেলে দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডলইস্টমনিটর এই খবর জানিয়েছে।

সিনজিল শহরে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের বেড়া

মূলত রামাল্লা ও নাবলুসকে সংযোগকারী একটি প্রধান সড়কের নিরাপত্তা জোরদারের অজুহাতে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, এখন শুধুমাত্র একটি নিয়ন্ত্রিত গেট দিয়েই শহরে প্রবেশ করা যায়, যেখানে ইসরায়েলি সেনারা সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকে। ফলে পুরো শহর যেন একটি খোলা আকাশের কারাগারে পরিণত হয়েছে, যেখানে প্রবেশ ও প্রস্থান সম্পূর্ণভাবে ইসরায়েলি সেনাদের মর্জির ওপর নির্ভরশীল।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বসতি-বিরোধী কর্মী আয়েদ গাফরি বলেন, ‘এটি ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের সমন্বিত একটি চক্রান্ত। এই বেড়া আমাদের শহরটিকে শ্বাসরুদ্ধ করে ফেলেছে, কৃষিজমি কেড়ে নিয়েছে এবং অবৈধ বসতি স্থাপনকারীদের আমাদের ওপর আতঙ্ক সৃষ্টির সুযোগ করে দিয়েছে।’

গাফরি আরও বলেন, ‘এই বেড়া ইতিমধ্যে শহরের পার্শ্ববর্তী প্রবেশপথগুলো বন্ধ করে দিয়েছে, প্রায় ৩০ ডুনাম (৭.৪ একর) কৃষিজমি ধ্বংস করেছে এবং সিনজিলের ৭০ শতাংশ জমি বাসিন্দাদের নাগালের বাইরে নিয়ে গেছে। কিছু বাড়ি এখন বেড়ার অন্যপাশে পড়ে যাওয়ায় শহরের বাকি অংশ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।’

তিনি যোগ করেন, ‘একসময়ের বাণিজ্যিক কেন্দ্র সিনজিল এখন প্রায় একটি ভূতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে।’

এই প্রাচীর ৩৩ বছর বয়সী কৃষক ও পশুপালক ওয়ালিদ ফুকাহার দৈনন্দিন জীবনকেও দুর্বিষহ করে তুলেছে। একসময় যেখানে তার জমিতে হেঁটে যেতে মাত্র কয়েক মিনিট লাগত, এখন সেখানে পৌঁছাতে তার আধ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে – তাও যদি সেনারা গেট দিয়ে যেতে অনুমতি দেয়। ওয়ালিদ বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই পাহারারত সেনারা গেট খুলতে অস্বীকার করে। ফলে আমরা আমাদের নিজেদের জমিতেই একপ্রকার বন্দী হয়ে পড়েছি।’

আরেক বাসিন্দা উম্মে মোহাম্মদ ফুকাহা বলেন, ‘ওরা এটাকে নিরাপত্তার অজুহাত দেয়, কিন্তু আসলে এটা আমাদের শ্বাসরোধ করার একটি কৌশল। আমাদের ছোট ছোট সব বিকল্প রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন একটাই প্রবেশপথ, সেটাও সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই জমিই আমাদের জীবনধারণের একমাত্র অবলম্বন। আমরা ছাগল পালন করি, চাষবাস করি। তাই এই জমি ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা আমরা ভাবতেও পারি না। অথচ তারা আমাদের সেদিকেই ঠেলে দিচ্ছে।’

উল্লেখ্য, গত কয়েক মাসে সিনজিলে অবৈধ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এপ্রিল মাসে তারা গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, গাড়ি ভাংচুর ও পোড়ানো, বাসিন্দাদের ওপর হামলা এবং একজনকে পিটিয়ে হত্যা করার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের উপনিবেশ ও প্রাচীর প্রতিরোধ কমিশনের মতে, ‘নিরাপত্তা অঞ্চল’ নামে পরিচিত এই ধরনের বেড়াগুলো এখন ফিলিস্তিনি ভূমি দখলের এক নতুন কৌশলে পরিণত হয়েছে।