আইএসপিআর: পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির জন্য আবেদন করেনি, ভারতই অনুরোধ করেছিল

পাকিস্তান কখনো যুদ্ধবিরতির জন্য আবেদন করেনি, বরং ৬ ও ৭ মে রাতে ভারতীয় বাহিনীর ‘কাপুরুষোচিত’ হামলার জবাব দেওয়ার পরেই ভারত যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেছিল বলে দাবি করেছেন পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্সের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী। রোববার (১১ মে) এক বিস্তারিত ব্রিফিংয়ে তিনি এই দাবি করেন।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী

আহমেদ শরিফ চৌধুরী বলেন, ‘এটি রেকর্ডে রাখা হোক, পাকিস্তান কখনো যুদ্ধবিরতি চায়নি। ৬ ও ৭ মে রাতে ভারতের ভীতু ও নৃশংস হামলার পর ভারতীয় পক্ষই যুদ্ধবিরতির অনুরোধ করেছিল। আমরা তখন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলাম, আমাদের জবাব দেওয়ার পরেই আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করব।’

তিনি আরও জানান, ‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’-এর অধীনে পাকিস্তানের পাল্টা অভিযান সম্পন্ন হওয়ার পরই ভারতের অনুরোধের জবাব দেওয়া হয়েছিল। ‘১০ মে, আমাদের প্রতিশোধমূলক অভিযান শেষে এবং আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধে আমরা ভারতের আগের অনুরোধের জবাব দিয়েছি,’ বলেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো ভারতীয় পাইলট পাকিস্তানের হাতে আটক থাকার গুজব প্রসঙ্গে আইএসপিআর ডিজি বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলছি, পাকিস্তানের হাতে কোনো ভারতীয় পাইলট নেই। এটি নিছক গুজব ও বিভ্রান্তিকর প্রচারণা।’

দুই পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার বিষয়ে তিনি মন্তব্য করেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের কথা চিন্তাই করা যায় না। এটি চরম বোকামি ও নিছক আত্মঘাতী পদক্ষেপ। যারা যুদ্ধ চায়, তারা আসলে ১.৬ বিলিয়ন মানুষের ধ্বংস কামনা করছে।’ তার মতে, যদি কেউ এই স্থান তৈরি করতে চায়, সে আসলে পারস্পরিক ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করছে।

আহমেদ শরিফ চৌধুরী আরও বলেন, ‘ভারতীয় আগ্রাসনের জবাবে পাকিস্তান কৌশলগত পরিপক্বতা দেখিয়েছে। আমরা পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের পথে না গিয়ে প্রচলিত সামরিক শক্তি ব্যবহার করে উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রেখেছি এবং ভারতকে দুই ধাপ বেশি শক্ত জবাব দিয়েছি।’

‘অপারেশন বুনিয়ান-উন-মারসুস’-এর সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, এটি ছিল ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি জাতীয় ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া এবং জনগণের সমর্থনে পাকিস্তান তার সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছে।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ৬ ও ৭ মে রাতের ভারতীয় হামলায় বেসামরিক লোকজন, নারী ও শিশুর প্রাণহানি ঘটে। এর প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তান ২৬টি ভারতীয় সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। এর মধ্যে সুরতগড়, সিরসা, আদমপুর, ভুজ, নালিয়া, বাথিন্ডা, বারনালা, অম্বালা, জম্মু, পাথানকোটসহ একাধিক বিমান ঘাঁটি ও সামরিক স্থাপনা এবং ভারতীয় বাহিনীর ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্রগুলোও ছিল বলে জানানো হয়।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল চৌধুরী বলেন, ‘সংঘাতের শুরুতে আমরা জাতিকে তিনটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম—উপযুক্ত জবাব দেবো, সময় ও স্থান আমরাই ঠিক করব এবং যখন আঘাত করব, তা বিশ্বের সবাই বুঝতে পারবে, এর জন্য ভারতীয় মিডিয়ার দরকার হবে না। আমরা সেই প্রতিশ্রুতি রেখেছি এবং বাস্তবায়ন করেছি।’