বিদেশি নয়, দেশীয় গরুর জাত উন্নয়নে জোর দিলেন ফরিদা আখতার

গরুর বিদেশি আধুনিক জাতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় জাতের সংরক্ষণ ও উন্নয়নের মাধ্যমেই দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের আধুনিক জাতের প্রয়োজন নেই। দেশীয় জাত রক্ষা করেই আমরা দুধ ও মাংস উৎপাদন করতে পারি, সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।’

ফরিদা আখতার

মঙ্গলবার (১৩ মে) সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে ‘দেশীয় গবাদিপশুর জাত উন্নয়ন: চ্যালেঞ্জ ও অগ্রগতির পথ’ শীর্ষক এক গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কৃত্রিম প্রজনন বিভাগ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

ফরিদা আখতার তার বক্তব্যে বলেন, ‘বলা হয় দেশীয় জাতের গবাদিপশু হারিয়ে যাচ্ছে, এটি পুরোপুরি সত্য নয়। উন্নত জাতের নামে ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন বিদেশি জাত আমদানি করা হয়েছে এবং প্রচার করা হয়েছে যে এগুলো ছাড়া বিকল্প নেই – এই ধারণাটি প্রশ্নবিদ্ধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদেশি নানা জাত নিয়ে আসছি, সেগুলো টেকসই নয়। এর পেছনে অনেক সময় ও শ্রম ব্যয় করলেও দীর্ঘমেয়াদী সুফল মিলছে না। দেশীয় গরু হারিয়ে যাওয়া রোধে একটি জরুরি রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে হবে।’

উপদেষ্টা মনে করেন, যারা বিদেশি জাত জনপ্রিয় করার চেষ্টা করেছেন, তারা দেশীয় গরুর জাত সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়েছেন এবং এখন খামারিদের অজ্ঞ বলছেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘দেশীয় জাত সংরক্ষণ করতে পারলেই প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নামকরণ সার্থক হবে।’ গরুর সিমেন বা বীজ বর্তমানে একটি ব্যবসায় পরিণত হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার বৈচিত্র্যের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, প্রাণীদের ক্ষেত্রেও অঞ্চলভিত্তিক বৈশিষ্ট্য থাকা স্বাভাবিক। এই বিবেচনায়, উপদেষ্টা জোনভিত্তিক দেশীয় গরুর জাত সংরক্ষণে প্রকল্প গ্রহণ এবং দেশীয় জাত পালনে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রণোদনা পেলে কৃষকেরা দেশীয় জাত পালনে আরও উৎসাহিত হবেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো: আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নীলুফা আক্তার এবং বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক শাকিলা ফারুক। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. বয়জার রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন কৃত্রিম প্রজনন দপ্তরের পরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহজামান খান এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃত্রিম প্রজনন দপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সফিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।