সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতিকে পার্লামেন্টের ইমপিচ, নতুন সঙ্কটে মালদ্বীপ

মালদ্বীপের সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারককে অভিশংসনের মাধ্যমে অপসারণ করেছে দেশটির পার্লামেন্ট। ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে বিচারপতি আজমিরালদা জহির এবং মাহাজ আলী জহিরকে অপসারণ করা হয়। এ নিয়ে রাজনৈতিক সঙ্কটকে থাকা মালদ্বীপে নতুন করে বিপাকে পড়েছে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর সরকার। খবর বিবিসির।

মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু

বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মালদ্বীপের পার্লামেন্টে থাকা প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর দল ক্ষমতাসীন পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস বুধবার সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারককে ইমপিচ করতে ভোটাভুটিতে যায়। অভিশংসন প্রস্তাবটি ৬৮-১১ ভোটে পাস হয়।

ভোটাভুটির সময় পার্লামেন্টের বাইরে বিরোধী দলের এমপিরা তাদের সমর্থকদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষোভকারীরা বিচারকদের ভয় দেখানো বন্ধ ও মুইজ্জুর পদত্যাগের দাবি জানায়।

ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটেছে, যখন দেশের সংবিধান সংশোধনে প্রক্রিয়া চালাচ্ছে মুইজ্জুর দল। কোনো আইন প্রণেতা দল পরিবর্তন করলে সংসদের আসন থেকে তাকে বরখাস্ত করার সংশোধনী আনতে যাচ্ছেন মুইজ্জু। এ নিয়ে বিরোধীদের চাপের মুখে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক সঙ্কট।

এদিকে সংবিধান সংশোধন উদ্যোগের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিটের শুনানি চলমান রয়েছে। তারই মধ্যে ঘটলো দুই বিচারকের ইমপিচমেন্ট, যা দেশটির রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরও গভীর করে তুলেছে।

জানা গেছে, ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে বিচারপতি আজমিরালদা জহির এবং মাহাজ আলী জহিরকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পার্লামেন্ট।

অভিযোগ রয়েছে, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর রাজধানী মালেতে একটি স্পা সেন্টারে অনাকাঙ্খিত অবস্থায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন সাবেক এমপি ইসমাইল লতিফ, যিনি নারী বিচারপতি আজমিরালদার স্বামী।

ইসমাইল লতিফকে গ্রেপ্তারের পর ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় তাকে আটকে রাখা হয় কিন্তু ফৌজদারি আদালতের একজন বিচারক তাকে ছেড়ে দেন। রায়ে বিচারক উল্লেখ করেন, পুলিশি অভিযানের সময় লতিফের গা ম্যাসাজকারী নারী সম্পূর্ণ পোশাক পরা অবস্থায় ছিলেন।

কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মুইজ্জুর ঘনিষ্ঠ বিচার বিভাগীয় নজরদারি ওয়াচডগ জুডিশিয়াল সার্ভিসেস কমিশন (জেএসসি) আজমিরালদা ও মাহাজের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়ের করে। এতে দাবি করা হয়, দুই বিচারক লতিফের মুক্তি নিশ্চিত করার জন্য নিম্ন আদালতের বিচারকদের বেআইনিভাবে তদবির করেছিলেন। এরপরই জেএসসি ওই দুই বিচারপতির অভিশংসনের সুপারিশ করে সংসদকে।

তবে বিরোধীদের অভিযোগ, সংবিধান সংশোধন ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টকে নিজের করায়ত্ত করতেই দুই বিচারপতিকে ইমপিচ করেছে মুইজ্জুর পার্লামেন্ট।

যদিও সুপ্রিম কোর্টে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে মুইজ্জু বলেছেন, আমি বিচার বিভাগে কোনো হস্তক্ষেপ করিনি। আমি [বিচার বিভাগীয় নজরদারি সংস্থা] নিয়ন্ত্রণ করি না।

এদিকে এই সংকট মালদ্বীপের সুপ্রিম কোর্টকে অচল করে দিয়েছে, সাংবিধানিক সংশোধনী সহ চলমান সব মামলার শুনানি বন্ধ করে দিয়েছেন বিচারকরা। এতে নতুন করে অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা জেগে উঠছে মালদ্বীপে।

বিচারপতি আজমিরালদা ও মাহাজ তাদের অভিশংসনের নিন্দা জানিয়েছেন। আজমিরালদা এক বিবৃতিতে বলেছেন, এটি মালদ্বীপের বিচার বিভাগের ওপর আক্রমণ। মালদ্বীপের সুপ্রিম কোর্টকে থামিয়ে দেওয়া কোনও সাধারণ বিষয় নয়। আমার আশা, একদিন, যখন এই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে ... সুপ্রিম কোর্ট ধ্বংসের প্রচেষ্টাকারী কর্মকর্তাদের জবাবদিহি করতে হবে।