সাম্য হত্যাকাণ্ড: নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ, তথ্য উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার প্রতিবাদে এবং নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তার দাবিতে বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য চত্বরে এক বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। সমাবেশে বক্তারা সাম্য হত্যাকাণ্ডকে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আখ্যায়িত করে ঘটনার দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান। একইসঙ্গে, তারা সারাদেশে নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন।

ছবি - সংগৃহীত

সমাবেশে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইয়্যেদ কুতুব, সহকারী সদস্য সচিব গালীব ইহসান, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ এবং বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ, সরকারী মাদ্রাসা-ই আলিয়া ঢাকার আহ্বায়ক রাকিব মন্ডল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

গালীব ইহসান তার বক্তব্যে বলেন, ‘শাহরিয়ার আলম সাম্য একজন মুসলিম ছাত্র নেতা এবং জুলাই বিপ্লবের অগ্রসেনা ছিলেন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পরই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটি কোনো স্বাভাবিক হত্যাকাণ্ড নয়, বরং এ হত্যার পেছনে রয়েছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র।’ তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অবিলম্বে সাম্য হত্যার মূলহোতাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের শহীদদের রক্তের ভিত্তিতেই এই সরকার গঠিত হয়েছে। অথচ বারবার দেখা যাচ্ছে সরকার বিপ্লবীদের এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। যদি সরকার সেই দায় পালন করতে না পারে, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেওয়াই উত্তম হবে।’

আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ‘সাম্য হত্যার পেছনে দেশি-বিদেশি গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে আমরা মনে করি। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’ তিনি ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘অতীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিয়ন্ত্রণ, বহিরাগতদের প্রবেশ বন্ধে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, তা থেকে প্রশাসন কেন পিছিয়ে গেল, তার জবাব দিতে হবে।’

আবদুল ওয়াহেদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে তাদের উপর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হামলার তীব্র নিন্দা জানান। এছাড়া, তথ্য উপদেষ্টার একটি বিতর্কিত বক্তব্য ও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপের প্রসঙ্গ তুলে তার পদত্যাগ দাবি করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সামনে গিয়ে তিনি হামলার পক্ষেই সাফাই গেয়েছেন। বোতল ছোড়ার মতো বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি সংগঠনের বিরুদ্ধে তার ব্যক্তিগত বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়েছে, যা তার দায়িত্ব পালনের শপথ ভঙ্গ করেছে। এমন একজন ব্যক্তি উপদেষ্টা পদে থাকতে পারেন না।’

সমাবেশ থেকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি তথ্য উপদেষ্টাকে অবিলম্বে অপসারণের আহ্বান জানানো হয়, অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

বিক্ষোভ সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ, সহকারী সদস্য সচিব অলিদ তালুকদার, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক গোলাম নূর শাফায়েতুল্লাহ, মাদ্রাসা-ই আলিয়ার সদস্য সচিব জিনাত হোসাইন, যুগ্ম-আহ্বায়ক সালমান ফারসি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম এবং কেন্দ্রীয় যুগ্ম-আহ্বায়ক আশরাফ উল্লাহ খান। বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক ইয়ামিন সরকার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।