লেবাননে তোলপাড়: ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে নাশিদ শিল্পী গ্রেপ্তার

লেবাননের একজন জনপ্রিয় নাশিদ (ইসলামি সংগীত) শিল্পীকে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি এবং হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ নেতাদের টার্গেটেড হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনায় পুরো লেবানন জুড়ে, বিশেষ করে হিজবুল্লাহ সমর্থকদের মধ্যে তীব্র চাঞ্চল্য ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

গত বছর ইসরায়েলি হামলায় বহু হিজবুল্লাহ নেতা নিহত হন

লেবাননের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আল-মুদোন এর বরাত দিয়ে মিডলইস্ট মনিটর জানিয়েছে, এম.এস. নামের (সংক্ষিপ্ত) প্রায় ৩০ বছর বয়সী ওই নাশিদ শিল্পীর সরবরাহ করা গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ইসরায়েলি বাহিনী হিজবুল্লাহর ৩৫ জনেরও বেশি সিনিয়র নেতাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিচারিক সূত্রে জানা গেছে, শিল্পী এম.এস.-এর বাবা হিজবুল্লাহর দুর্ধর্ষ রাদওয়ান ফোর্সের একজন সদস্য এবং তার ভাই সংগঠনের হয়ে লড়াইয়ে ‘শহীদ’ হয়েছেন। এই পারিবারিক সংযোগের সুবাদে এম.এস. হিজবুল্লাহর অভ্যন্তরীণ মহলে সহজেই প্রবেশাধিকার পান এবং এই সুযোগের অপব্যবহার করে তিনি সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নাম, ঠিকানা এবং নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত কমান্ডারদের স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহ করতেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, সংগৃহীত এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তিনি পরবর্তীতে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পাচার করতেন। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই ২০২৪ সালে চলমান ইসরায়েল-লেবানন সংঘাতে ইসরায়েলি বাহিনী হিজবুল্লাহর শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ বৈরুত এবং দক্ষিণ লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় সুনির্দিষ্ট অভিযান পরিচালনা করে এবং হিজবুল্লাহ নেতাদের টার্গেট করে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড চালাতে সক্ষম হয়।

আদালত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, যে ধরনের গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছে, তা হিজবুল্লাহর সর্বোচ্চ নিরাপত্তাবেষ্টিত নেটওয়ার্কের ঘনিষ্ঠ সদস্য ছাড়া অন্য কারও পক্ষে সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব। এটি সংগঠনের জন্য একটি বড় ধরনের নিরাপত্তা ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বর্তমানে এম.এস. গ্রেপ্তার অবস্থায় রয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে বিস্তারিত তদন্ত চলছে। দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অভিযুক্ত শিল্পীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। এই ঘটনায় হিজবুল্লাহর অভ্যন্তরে এবং সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে, যা সংগঠনটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকেও সামনে এনেছে।